রোববার ‘ওয়ানগালা’ উপলক্ষে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কালাপুর গারো লাইনে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
Published : 01 Dec 2024, 10:15 PM
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় গারো জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘ওয়ানগালা’ উদযাপিত হয়েছে। এ উৎসবে গারোরা তাদের প্রধান আরাধ্য দেবতা মিসি সাংলজনের উদ্দেশে নতুন ফসল উৎসর্গ করেন।
প্রতি বছর নভেম্বর মাসের শেষ থেকে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে উপজেলার ফুলছড়া গারো লাইনে আয়োজন করা হয় ‘ওয়ানগালা’ উৎসবের। যেখানে অংশ নেন শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গারো সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ।
তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী নানা রঙের নিজস্ব পোশাকে উৎসবে হাজির হন। এ সময় নতুন ফসল ঘরে তোলার বিভিন্ন অনুসঙ্গসহ নৃত্য-গীতের মধ্যে দিয়ে শিল্পীরা উপস্থাপন করেন তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। অনেকে সুপারী, ধান, নারিকেল, পেঁপে, কচুসহ বিভিন্ন ফসলাদি দেবতার উদ্দেশে উৎসর্গ করেন।
এ বছরও রোববার ‘ওয়ানগালা’ উপলক্ষে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর গারো লাইনে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে গারো সম্প্রদায়ের মানুষজন এসে এখানে মিলত হন।
উৎসবের আয়োজক শিক্ষক সামুয়েল হাজং বলছিলেন, ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও নিজের মনোবাসনা করে নতুন ফসলাদি নিবেদন করা। এই উৎসবে গারোদের আরাধ্য দেবতা মিসি সালজং এর উদ্দেশে নতুন ফসল উৎসর্গ করা হয়।
আদিবাসী নেতা ফেলিক্স আশাংক্রা জানান, এ উৎসবে একইসঙ্গে পরিবারের সদস্যদের মঙ্গল কামনাসহ দেশে যেন সুখ-শান্তি বহমান থাকে তাই প্রার্থনা করা হয় শস্যদেবতার কাছে। সুপ্রাচীন কাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।
তবে গারোদের ভাষা-সংস্কৃতি এখন হুমকির মুখে, এগুলো রক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন সাহিত্যপ্রেমীরা।
অপর আয়োজক পার্থ বলেন, গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসবই হলো ‘ওয়ানগালা’। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্যে। তাই অনেকেই একে ‘নবান্ন বা ধন্যবাদের’ উৎসবও বলে থাকেন। আবার ‘ওয়ানগালা’ উৎসব ‘একশ ঢোলের’ উৎসব নামেও পরিচিত।
গারোরা নিজেদের ‘আছিক মান্দি’ বা ‘পাহাড়ি মানুষ’ হিসেবে পরিচয় দিতে অধিক পছন্দ করে। তবে মৌলভীবাজারের গারোরা নিজেদের শুধুই ‘মান্দি’ বা ‘মানুষ’ হিসেবে পরিচয় দেয়।
বিশেষ প্রার্থনা শেষে ছিল গারোদের নিজস্ব ঐতিহ্যের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।