নরসিংদীতে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, ক্ষতিপূরণ দাবিতে কারখানার ফটকে স্ত্রী-সন্তান

নিহত প্রকৌশলীর স্বজনরা চান কারখানার মালিক এসে তাদের সঙ্গে কথা বলুক; এর আগে তারা সেখান থেকে সরবেন না বলে জানান।

নরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2023, 03:28 PM
Updated : 12 May 2023, 03:28 PM

নরসিংদীতে চীনা মালিকানার একটি কারখানায় কাটা পড়ে এক চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী-সন্তান ক্ষতিপূরণের দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির ফটকে অবস্থান নিয়েছেন।

নরসিংদী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ জানান, ক্ষতিপূরণের দাবিতে বৃহস্পতিবার [১১ মে] থেকে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন চীন থেকে আসা নিহত প্রকৌশলীর স্ত্রী, ছেলে ও তাদের স্বজন এক নারী। 

গত ৩ মে নরসিংদী সদর উপজেলার শীলমান্দী এলাকায় অবস্থিত ‘ফুজিয়ান টেক্সটাইরে’ এই দুর্ঘটনা ঘটে। 

ফুজিয়ান টেক্সটাইলে কর্মরত ছিলেন চীনা নাগরিক প্রকৌশলী লি রংহুয়া (৫৭)। 

পুলিশ, নিহত প্রকৌশলীর স্বজন ও কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানায়, এই কারখানায় বাতিল কাপড় থেকে সুতা তৈরি করা হয়। এখানে কর্মরত ছিলেন চীনের জিয়াংসু প্রদেশের ফেংচেং শহরের বাসিন্দা প্রকৌশলী লি রংহুয়া। গত ৩ মে কর্মরত অবস্থায় কারখানার চলন্ত মেশিনে কাজ করার সময় কাটা পড়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যান তিনি। 

সিসিটিভি ভিডিওতে এই দৃশ্য ধারণ হয়। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফ্রিজিং করে তার মরদেহ সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, ফুজিয়ান টেক্সটাইলের সামনের ফটকে নির্বাক বসে আছেন নিহত প্রকৌশলীর স্ত্রী-সন্তান। বৃহস্পতিবার থেকে কারখানার প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়েছেন চীন থেকে আসা তার স্ত্রী ঝেং মেইলিং, ছেলে লি রংইয়ান এবং তাদের স্বজন এক নারী। 

স্বামীর মৃত্যুর জন্য স্ত্রী কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য।

ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা না থাকায় স্বজনরা তাদের কথা পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারছেন না। তবে গুগল ট্রান্সলেটে লিখে স্থানীয় সাংবাদিকদের বুঝিয়েছেন এই কারখানার মালিক চীনের ঝেজিয়াং-এর নাগরিক। তিনি ওই প্রকৌশলীর মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। 

এ ঘটনায় সেদেশে এই কারখানা মালিকের বিরুদ্ধে প্রকৌশলীর স্ত্রী মামলা করেছেন বলেও জানান। 

মৃত্যুর কারণ জানা এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে দুই দিন ধরে তারা কারখানার সামনে অবস্থান করছেন বলে জানান।

ফুজিয়ান টেক্সটাইলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নওশাদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, চীনা আইন অনুযায়ী এমন দুর্ঘটনায় ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান থাকলেও তারা ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিতে সম্মতি হয়েছেন। 

“কিন্তু নিহত প্রকৌশলীর পরিবারের সদস্যরা তা মানছেন না। তারা মরদেহ গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছেন না; ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে অনড় রয়েছেন।” 

নরসিংদী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ বলেন, নিহত প্রকৌশলীর স্বজনরা চীন থেকে এসে কারখানার ফটকে অবস্থান নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অস্বাভাবিক ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষকেই সমাধান করতে হবে। 

এ ঘটনায় নরসিংদী মডেল থানায় গত ৫ মে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে বলে হারুন জানান। 

এদিকে, শুক্রবার বিকাল ৫টায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের একটি দল কারখানা পরিদর্শন করেছে। ওই সময় তারা সাংবাদিকদের কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। 

এ ব্যাপারে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের নারায়ণগঞ্জ জোনের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ইমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এখানে এসেছি। নিহত প্রকৌশলীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছি এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছি। 

“কিন্তু তারা সেখান থেকে নড়তে রাজি নন। তারা চান কারখানার মালিক এখানে আসুক। আসলে তারা কথা বলবেন।” 

তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ দেখছে বলে জানান তিনি।