Published : 06 May 2025, 04:21 PM
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সড়কে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
ভূরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ড থেকে ধলডাঙ্গা ঘাটপার পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটারের এই রাস্তার কাজ শেষ হতে না হতেই হাতের খোঁচায় পাথর ও পিচের ঢালাই উঠে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নিম্নমানের কাজ ও হাতের খোঁচায় পিচ উঠে যাওয়ার ছবি ও ভিডিও সামাজিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা রাস্তার কাজও বন্ধ করে দেন।
তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী ইনছাফুল হক সরকার বলেন, “কাজে কোনো অনিয়ম খুঁজে পাওয়া যায়নি।”
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির মেরামত কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। কোথাও কোথাও ময়লার ওপরেই দেওয়া হয়েছে পিচ ঢালাই। রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীর পায়েও লেগে যাচ্ছে পিচ। আবার যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে সড়কে। এমনকি পা দিয়ে ঘষলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। অথচ সড়ক কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব ও পিচ ঢালাইয়ে বিটুমিন কম দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কমপ্রেশার মেশিন দিয়ে সড়ক পরিষ্কার না করে ধুলা-ময়লার ওপরই পিচ ঢালাই করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ১৭ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ২২৮ টাকা ব্যয়ে সাড়ে আট কিলোমিটার রাস্তাটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এরমধ্যে ভূরুঙ্গামারী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ মিটার রাস্তা আরসিসি ঢালাই এবং অবশিষ্ট রাস্তা কার্পেটিং হওয়ার কথা।
সরকারের উন্নয়ন সহযোগী এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় কাজটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। কাজটির মেয়াদকাল ধরা হয় ৫ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ৩০ জুন ২০২৫।
দরপত্রে কাজটি পায় ‘আরএবি-আরসি-বিসি-এইচটি জেভি’ নামের কুড়িগ্রামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে কাজটি মো. বেলাল হোসেন নামক এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন।
নিম্নমানের উপকরণের বিষয়ে সাব কন্ট্রাক্টে কাজ নেওয়া বেলাল হোসেন বলেন, “সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। পিচের বিটুমিন জমাট না বাধায় মোটরসাইকেল চালানোর কারণে পিচ উঠে গেছে। পরে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।”
তবে উপজেলা প্রকৌশলী ইনছাফুল হক সরকার বলেন, “কাজে কোনো অনিয়ম খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাস্তার মাটি ও অন্যান্য কারণে কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তা ঠিক করতে বলা হয়েছে।”
মঙ্গলবার দুপুরে কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ সময় স্থানীয় লোকজন তাকে ঘিরে ধরে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন- “কাজের মান সন্তোষজনক। তারপরও সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে কাজের গুণগত মান নিয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।”
একইভাবে সরকারি কাজে অন্যায়ভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কোনো বাধার সৃষ্টি করা হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।