চাঁদপুরে আগের চেয়ে ইলিশের দাম কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
Published : 04 Nov 2024, 07:16 PM
মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নেমেছেন জেলেরা। চাঁদপুরে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ।
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত নদীতে ধরা ইলিশ বিক্রির জন্য উপকূলীয় আড়তগুলোতে নিয়ে আসছেন জেলেরা। তিন সপ্তাহ পর আবার ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে উঠেছে আড়তগুলো। আগের চেয়ে ইলিশের দামও কিছুটা কম।
ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশ নিয়ে আড়তে আসছেন জেলেরা। আবার কেউ কেউ নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে বেরিয়ে পড়ছেন।
সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের জেলে মো. শরীফ জানান, ভোররাতে এক নৌকায় তারা তিনজন মেঘনায় ইলিশ ধরতে নেমেছিলেন। জালে আটক ছোট-বড় ইলিশ বিক্রি করেছেন পাঁচ হাজার টাকা। কিছু সময় পর তারা আবার নদীতে নামবেন।
হরিণা ফেরিঘাটে আড়তে নরসিংদী থেকে তাজা ইলিশ কিনতে এসেছেন কয়েকজন যুবক। তাদের মধ্যে মোস্তাক জানান, এর আগেও এই মাছঘাটে এসেছেন তারা। তাজা ইলিশ কেনার জন্য এবারও এসেছেন। এ ঘাটের ইলিশে কোনো ভেজাল নেই। ছোট-বড় মিলে ১৩ হাজার টাকার ইলিশ কিনেছেন তারা। তুলনামূলক কম দামে পেয়েছেন।
পাঙ্গাস মাছের পাইকারি বিক্রেতা কালু পাটওয়ারী বলেন, গত বছর এই সময়ে জালে অনেক পাঙ্গাস ধরা পড়েছে। এ বছর সংখ্যায় খুবই কম। আজকে ছোট আকারের পাঙ্গাস প্রতিকেজি ৭০০ টাকা এবং বড় সাইজের পাঙ্গাস প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা। প্রতি পাঙ্গাসের ওজন পাঁচ কেজি থেকে শুরু করে আট থেকে ১০ কেজি।
আড়তদার সেলিম সৈয়াল বলেন, “এ ঘাটে ইলিশ হালিতে বিক্রি হয়। ছোট আকারের একহালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। মাঝারি সাইজের (৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজন) এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ইলিশ প্রতি হালি সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার রামপুর বাজার থেকে ইলিশ কিনতে এসেছেন আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, “আগের তুলনায় দাম একটু কম। ৪৫০ টাকা করে পাঁচ হালি ইলিশ কিনেছি। ওজন ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম। নিষেধাজ্ঞার আগে এই সাইজের ইলিশ প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।”
ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য সরকার ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তা প্রায় সবাই মেনেছেন বলে জানান মাছ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল।
তিনি বলেন, “সকাল থেকে জেলেরা ইলিশ নিয়ে আসছেন। তবে সাইজ ছোট। বড় ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। আবার কিছু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ডিম ছেড়ে দেওয়া। তবে কয়েকদিন গেলে বুঝা যাবে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশের বিচরণ কী পরিমাণ আছে।”
ইলিশ গবেষক আনিছুর রহমান ইলিশের বলেন, ইলিশ পরিভ্রমণশীল মাছ। বছরজুড়ে ইলিশ ডিম ছাড়ে। এ সময় ইলিশ সাগর থেকে ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে আসে। তবে ইলিশের চলার পথ সুগম করলে নদীতেও বছরজুড়ে ইলিশ মিলবে।
ডিম ছাড়ার পরের ইলিশ নিয়ে গবেষণা
প্রজননের জন্য সাগর থেকে নদীতে আসা ইলিশ নিয়ে প্রতিবছর গবেষণা করা হয়। আর এই কাজটি করেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের গবেষকরা।
এ বছর পদ্মা ও মেঘনায় ২২ দিন ৭০ কিলোমিটার নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞার সময় এবং বর্তমানে চলছে ইলিশ গবেষণা কার্যক্রম।
সোমবার হরিণা মাছঘাটে প্রায় এক ঘণ্টা ইলিশের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় বলে জানান মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মৎস্য বৈজ্ঞানিক রিজভী কায়সার।
সকাল ৮টায় সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাটের পাশে মাছের আড়তে ডিম ছাড়া ইলিশের পরিমাপ করতে দেখা গেছে মৎস্য বৈজ্ঞানিক ও এক গবেষককে।
ইলিশের প্রকৃত অবস্থান জানার জন্য হরিণা ঘাটকে উপযুক্ত স্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন মৎস্য গবেষকরা। এই ঘাটে প্রায় ১০টি আড়তে ইলিশ কেনা-বেচা হয়। ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের ইলিশের দৈর্ঘ্য, প্রস্ত, ওজন পরিমাপ করেন গবেষকরা।
কী পরিমাণ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। কী পরিমান ডিমসহ ধরা পড়ছে। আর ছোট সাইজের ইলিশ ডিম ছাড়ছে কি-না তা জরিপ করা হয়।
প্রতিবছর এই সময়ে মতলব উত্তর উপজেলা থেকে শুরু করে সদর ও হাইমচর উপজেলার নদী উপকূলীয় এলাকার আড়ৎগুলোতে এই জরিপ কার্যক্রম চলে। গবেষণার জন্য নিষেধাজ্ঞার সময় মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষকরা তাদের নিজস্ব জাহাজে করে অভয়াশ্রম এলাকায় ফাঁদ বসিয়ে ইলিশ ধরে গবেষণা কার্যক্রম চালায়।
গবেষণা সহকারী আব্দুস সালাম বলেন, চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, হরিণা ফেরিঘাট ও হাইমচরের কয়েকটি আড়তে ইলিশের অবস্থান সম্পর্কে জরিপ করা হচ্ছে। এই কাজের ফলাফল সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি নেই।
তবে এই কার্যক্রমের ফলাফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আকারে পাঠাবেন; পরে সেখান থেকে প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।