“রেলপথ নির্মাণ-সংস্কার কাজ এবং নদী শাসনে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলে একটি পাথরও অবিক্রিত থাকবে না।”
Published : 04 Nov 2024, 09:48 AM
দিনাজপুরের মধ্যপাড়া খনি থেকে ‘রেকর্ড পরিমাণ’ পাথর উত্তোলন করা হলেও ‘সঠিক পরিকল্পনা ও নীতিমালার অভাবে’ বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।
অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিকটন পাথর। এতে করে প্রতিষ্ঠানটি যেমন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি পাথর ব্যবসায়ী ও স্থানীয় শ্রমিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান বলছিলেন, “ভবানীপুর থেকে মধ্যপাড়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার রেলপথটি দীর্ঘদিন ধরে অচল পড়ে আছে। পাথর পরিবহনের জন্যই এই রেলপথ চালু করা হয়েছিল। এখন এটি সচল করা খুব জরুরি।
“এ ছাড়া রেলবিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) উন্নয়ন ও সংস্কারকাজে যদি মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে একটি পাথরও অবিক্রিত থাকবে না।”
কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথর খনি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানি লিমিটেড ২০০৭ সালের ২৫ মে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। সে সময় পেট্রোবাংলা তিন শিফটে পাঁচ হাজার মেট্রিকটন পাথর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উৎপাদন শুরু করে। তবে তা কখনোই ৮০০ টনের বেশি উৎপাদন করতে পারেনি।
এরপর ২০১৪ সালে খনির উৎপাদনের দায়িত্ব দেওয়া হয় জার্মানিয়া-ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) নামে দেশীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। জিটিসি ভূগর্ভে অত্যাধুনিক খনন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দক্ষ প্রকৌশলী ও দক্ষ শ্রমিক দিয়ে উৎপাদন শুরু করে এবং উৎপাদন বাড়তে থাকে।
তারপর থেকে ধীরে ধীরে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়তে থাকে। চলতি বছরের অক্টোবরে সর্বোচ্চ দেড় এক লাখ মেট্রিকটন পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বছরে যে পরিমাণ পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে; এটি তার চেয়েও বেশি বলে খনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
তবে পাথর অবিক্রিত থাকায় তার সুফল মিলছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ী মোক্তারুল ইসলাম বলেন, মধ্যপাড়ার পাথর বিক্রি কমে যাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণ ও সংস্কারকাজে আমদানি করা ভারতীয় পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ রেলপথ নির্মাণ-সংস্কার কাজ এবং নদী শাসনে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলে একটি পাথরও অবিক্রিত থাকবে না।
অপর পাথর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এলওসির (লাইন অব ক্রেডিট) রেল প্রকল্পে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারে বাধ্যতামূলক নির্দেশ না থাকায় ঠিকাদার ভারতীয় পাথর ব্যবহার করছে। এর ফলে আগে যেখানে দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক পাথর লোড হতো সেখানে এখন লোড হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক।
পাথর ব্যবসায়ীদের অভিমত, সরকার যদি রেলবিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারিী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডারে মধ্যপাড়া পাথর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে তাহলে এখানকার পাথর নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে না।