রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশস্থলে আগে জমায়েত হতে মানা

সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে শোভাযাত্রা ও মিছিল করা যাবে না।

বদরুল হাসান লিটনরাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2022, 12:55 PM
Updated : 30 Nov 2022, 12:55 PM

রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে মহানগর পুলিশ। তবে সমাবেশের দিন ৩ ডিসেম্বরের আগে সেখানে নেতাকর্মীরা জমায়েত হতে পাবেন না বলে শর্ত দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার দুপুরে চিঠি দিয়ে অনুমোদন ও শর্তগুলোর বিষয়ে জানানো হয়েছে বলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান।

তিনি আরও বলেন, “আট শর্তে গণসমাবেশ ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

সমাবেশের জন্য আবেদনকারী বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর নামে পুলিশের পক্ষ থেকে এই চিঠি ইস্যু করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর হাজী মুহম্মদ মহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ যা স্থানীয়ভাবে ‘মাদ্রাসা মাঠ’ নামে পরিচিত সেখানে গণসমাবেশে অনুমতি দেওয়া হয়।

বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে সাংগঠনিক বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এসব গণসমাবেশের আগে অধিকাংশ স্থানে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে ধর্মঘট আহ্বান করছেন।

এতে বাসসহ অন্যান্য যানবাহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসতে পারছেন না কিংবা ভোগান্তি শিকার হচ্ছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে। দলটি বলছে, তাদের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে এই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে।

পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অনেক স্থানেই দেখা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা এক-দুদিন আগেই সমাবেশস্থলে এসে জড়ো হন। সেখানে মাঠেই তারা রাত্রিযাপন করেন এবং সমাবেশ শেষ করে ফিরে যান।

গত ২৬ নভেম্বর নাটোরে সভা করে রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক পরিষদও একই ধরনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করাসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। না হলে ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় পরিবহন ধর্মঘটে যাবে বলেছে রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক পরিষদ।

এই অবস্থার মধ্যেই রাজশাহী মহানগর পুলিশ সেখানে গণসমাবেশের আগে নেতাকর্মীদের মাঠে জমায়েত না হওয়ার শর্ত দিয়ে দিয়েছে। তবে মঞ্চ তৈরির কাজ চালাতে কোনো বাধা নেই।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ ব্যাপারে বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত খুবই অযৌক্তিক। এরা মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকানোর জন্য। রাজশাহীর বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন। তাদের কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।“

পুলিশের দেওয়া শর্তগুলো হলো-

১. মাদ্রাসা ময়দান চত্বরের মধ্যে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমাবেত হওয়া এবং যান ও জনচলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য সমাবেশে আগতদের চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে।

২. দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কার্যকলাপ এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।

৩. সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে শোভাযাত্রা ও মিছিল করাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এরূপ কার্মকাণ্ড করা যাবে না। ব্যানার-ফেস্টুন ও পতাকাতে কোনো লাঠিসোঠা ও রড ব্যবহার করা যাবে না। ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করতে হবে।

৪. আযান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।

৫. মঞ্চ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত (আইডি কার্ডসহ) তারা ব্যতীত অন্য কেউ আগামী ০৩/১২/২০২২ তারিখ সমাবেশ শুরুর পূর্বে সমাবেশস্থলে প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পারবে না। সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম ওই দিন ১৪.০০ ঘটিকায় শুরু করে ১৭.০০ ঘটিকায় শেষ করতে হবে। সমাগত নেতাকর্মীরা যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বা আয়োজকদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে।

৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। সমাবেশস্থলের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর/মাইক/সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না। সমাবেশস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ, ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করা যাবে না।

৭. যানবাহনসমূহ শহরের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না। রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। মূল সড়কে কোনো পার্কিং করা যাবে না।

৮. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়। স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।

আরও পড়ুন:

Also Read: ১১ দাবি না মানলে রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট

Also Read: রাজশাহীতে মাদ্রাসা মাঠে গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি

Also Read: সমাবেশ ঘিরে মামলা-গ্রেপ্তারে হয়রানির অভিযোগ বিএনপির