“পরিস্থিতির কারণে কাজ না করে গত ৯ ডিসেম্বর সরকারি কোষাগারে ৫০ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।”
Published : 22 Dec 2024, 10:18 PM
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুদক।
রোববার সকাল থেকে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে বলে দুদক ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক বুলু মিয়া জানান।
দুদক জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফুলবাড়ীয়ায় নেওয়া হয় আটটি প্রকল্প।
এর মধ্যে ইচাইল উচ্চ বিদ্যালয় সংস্কারে ১০ লাখ টাকা, আন্ধারিয়াপাড়া বিডিএস দাখিল মাদ্রাসা ১০ লাখ টাকা, কাচিচূড়া উচ্চ বিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, ছলেমননেছা এতিমখানা ও দাখিল মাদ্রাসা ১০ লাখ টাকা, অন্বেষণ উচ্চ বিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের রাস্তা (এইচবিবি) ১০ লাখ টাকা, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির জন্য ১০ লাখ টাকা, উপজেলা চেয়ারম্যানের কোয়ার্টার মেরামতে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়।
চলতি বছরের ১১ জুন প্রসাদ এন্টারপ্রাইজ, অর্ণব এন্টারপ্রাইজ এবং উড়াল এন্টারপ্রাইজ- এই তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ পান।
দুদক কর্মকর্তা বুলু মিয়া বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সরেজমিন প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করছি। ছয়টি প্রকল্প যাচাইকালে আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। দেখা গেছে, কোনো কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, আবার কোনো কাজ চলমান দেখিয়ে আগেই টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।
“বিশেষ করে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির কাজ এখনও চলমান। অথচ বিল অনেক আগে তুলে নিয়েছে। উপজেলা পরিষদের পিছনে যে এইচবিবি রাস্তাটা রয়েছে, আমাদের কাছে দেখে মনে হয়েছে, অনেক আগের দু-এক জায়গায় সংস্কার হয়েছে শুধু।”
দুদক কর্মকর্তা জানান, এসব প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) পাওয়া যায়নি। তিনি সম্প্রতি বদলি হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। উনার দায়িত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়েছেন। উনার সঙ্গে কথা হয়েছে।
প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাইলে ছলেমননেছা এতিম খানা ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আসাদুল্লাহ বলেন, “এতিমখানা ও মাদ্রাসার উন্নয়নে বরাদ্দ এসেছে সেটি গত ৮ ডিসেম্বর জানতে পেরেছি। কারণ ৮ ডিসেম্বর উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান আমাদেরকে ডেকে বলেছেন মাদ্রাসার উন্নয়নে তারা চেয়ার-টেবিল কিনে দিতে চান। আমাদের নামে নাকি কিছু টাকা বরাদ্দ এসেছে।
“আমি তখন বলেছি, যা ভালো হয় তাই করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো কিছু পাইনি। এখন শুনছি, এসব টাকা নাকি আত্মসাত হয়েছে। আজকে দুদুকও এসেছে, যা সত্য তাই বলেছি।”
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রসাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী বিশ্বজিৎ প্রসাদ বলেন, “আটটি প্রকল্পের মাঝে তিনটি প্রকল্পের কাজ হয়েছে। বাকি প্রকল্পের টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীর ফেরত দেওয়ার কথা।”
উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়নে টাকা উত্তোলন করা হলেও পরিস্থিতির কারণে কাজ না করে গত ৯ ডিসেম্বর সরকারি কোষাগারে ৫০ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।
“বাকি ২৫ লাখ টাকার বিষয়ে সদ্যবিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।”
প্রকল্পের সভাপতি ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল এখন ত্রিশাল পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি তদন্তের বিষয়ে এখন কিছু বলবেন না।