“সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ কিংবা অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে।”
Published : 08 Nov 2024, 01:41 PM
বছরের পর বছর ধরে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলাবাসীর নিত্যসঙ্গী অসহনীয় যানজট। একাধিকবার নানা পর্যায়ে আলোচনার পরও সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষই এই ভোগান্তি কমাতে ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে উপজেলাবাসীর দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র ‘পাঁচ মাথা’। এখানেই মিলিত হয়েছে গাইবান্ধা সদর, মাদারগঞ্জ, নলডাঙ্গা, তুলসীঘাট এবং ধাপেরহাট ও ভাতগ্রাম থেকে আসা পাঁচটি সড়ক।
এর আশেপাশেই উপজেলা সদরের মূল শহর, কাঁচা বাজার ও সাদুল্লাপুর থানা, ব্যাংক, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিপণী বিতানগুলো অবস্থিত।
বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যস্ততম এ এলাকায় সড়কের পাশে যাত্রীর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও রিকশাভ্যান, ইজিবাইক এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পরিবহনগুলোও সড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করাচ্ছে। আবার কৃষিকাজের জন্য ভর্তুকি দিয়ে নিয়ে আসা ট্রাক্টর ও পাওয়ার ট্রলিগুলো বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে এই সড়ক ধরে চলাচল করছে।
এছাড়া সড়কের দুইপাশের ফুটপাত দখল করে পেতে রাখা হয়েছে নানা সামগ্রীর দোকান। সব মিলিয়ে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় যানজটে স্থবির হয়ে আছে পুরো এলাকা।
উপজেলা শহরবাসীর এই ভোগান্তি শুধু সকাল বা বিকালের নয়। সারাদিনই তাদের পোহাতে হয় এ দুর্ভোগ। প্রতিদিনের অসহনীয় যানজটে নষ্ট হচ্ছে মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা।
শহরবাসীর অভিযোগ, যানজট নিয়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটিতে একাধিকবার আলোচনা হলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোনো ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ কিংবা অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সাদুল্লাপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. নুরুন নবী বলেন, “গত ৫ অগাস্টের পর কিছুদিন ছাত্ররা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে। তখন শহরের অবস্থা ভালো ছিল।
“কিন্তু এখন সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ কিংবা অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে।”
সাদুল্লাপুর হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা এনজিও কর্মী সামিয়ুর রহমান শামীম বলেন, গাইবান্ধা সদর থেকে সাদুল্লাপুর-পীরগঞ্জ ও বড়দরগাঁ হয়ে রংপুর যাতায়াতে দূরত্ব কম। আবার ধাপেরহাট থেকে সাদুল্লাপুর, নলডাঙ্গা হয়ে সুন্দরগঞ্জ, বামনডাঙ্গা, পীরগাছা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট যাতায়াতে দূরত্ব-সময় কম।
ফলে এসব পথের শত শত পরিবহন এ মোড় ব্যবহার করে যাতায়াত করে। এছাড়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষও প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে প্রবেশ করেন।
কিন্তু এই বিপুল যানবাহন সুশৃঙ্খলভাবে চলাচলে সড়কে কোনো উদ্যোগই নেই। যে যার ইচ্ছা মতো চলছে, তাই সবসময় অসহনীয় যানজটও লেগে থাকে।
ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যানের চালক সাবু মিয়ার (৫৩) বক্তব্যও একই রকম।
নিজের ভাষায় তিনি বললেন, “আস্তাত মদে দুই পাকে দোকান বসাছে। যাই জেং করি পারে আস্তার মদে গাড়ি থামায়ে পেসেঞ্জার নামাতেছে আবার তুলতেছে। এ জন্যে পোত্তেকদিন সাদুল্লাপুরের পাঁচ মাথার মোড়ত জাম নাগি থাকে।”
(রাস্তার মধ্যে দুই পাশে দোকান বসিয়েছে। যে যেমন পারে রাস্তার মধ্যে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী নামাচ্ছে আবার তুলতেছে। এ জন্য প্রতিদিন সাদুল্লাপুরের পাঁচ মাথার মোড়ে জাম লেগে থাকে।)
উপজেলার ইদিলপুর গ্রামের প্রাথমিকের শিক্ষক আশিকুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন কাজে ধাপরেহাট রোড হয়ে প্রায় সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরে আসতে হয়। কিন্তু যানজটের কারণে দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না।”
উপজেলা রিকশা ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রহুল আমিন সরকার জুয়েল জানান, “শহরের যানজট সমস্যার সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ইজিবাইক, অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যানের জন্য আলাদা আলাদা স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করা জরুরি।
এই শ্রমিক নেতা পরামর্শ দেন, “গাইবান্ধা থেকে আসা বাহনের জন্য উপজেলা পরিষদ কিংবা হাসপাতাল এলাকায়, মাদারগঞ্জ থেকে আসা বাহনগুলোর জন্য পশ্চিমপাড়া তালেরতল, নলডাঙ্গা থেকে আসা বাহনগুলোর জন্য উপজেলা ভূমি অফিস এলাকায় স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করা দরকার।
“এছাড়া তুলসীঘাট থেকে আসা যানবাহনগুলোর জন্য পোস্ট অফিস এলাকায় এবং ধাপেরহাট ও ভাতগ্রাম থেকে আসা যানবাহনগুলোর জন্য সোনালী ব্যাংক এলাকায় স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করা হলে শহরে যানজট একেবারে কমে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “এছাড়া সড়ক দখল করে রাখা দোকানগুলো উচ্ছেদ করা দরকার এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এই মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।”
এসব বিষয়ে বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল কাইয়ুম হুদা বলেন, “প্রয়োজনীয় অর্থ ও লোকবলের অভাবে যানজট নিরসনে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হয়নি।
“তবে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি’র সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় যানজট দিন দিন বেড়েই চলছে।”
সাদুল্লাপুর থানার ওসি মো. তাজ উদ্দিন খন্দকার বলেন, “যানজট নিরসনের জন্য বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা অব্যাহত আছে।”
সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হাবীব জানান, “এই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শীঘ্রই বিষয়টি সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে।”