ঢাকার বৈঠকেও সুরাহা হয়নি, ধর্মঘটেই থাকছেন চা শ্রমিকরা

চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকমৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2022, 06:34 PM
Updated : 17 August 2022, 08:32 PM

চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে চার ঘণ্টার বেশি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ঢাকার বিজয়নগরে শ্রম ভবনে চা-বাগান মালিক ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর এই বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত ১১টার কিছুক্ষণ আগে।

মিটিং শেষে খালেদ মামুন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাগান মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে তারা চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠকে করেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।

“কিছুক্ষণ আগে শেষ করলাম। আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নাই যে শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করবেন কিনা। শ্রমিকনেতারা একদিন সময় চেয়েছেন। তারা শ্রীমঙ্গল চলে যাবেন। সেখানে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে আমাদেরকে কালকের মধ্যে জানাবেন।”

গত ৯ অগাস্ট থেকে চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। কিন্তু মালিকপক্ষ ‘১৩৪ টাকা করতে সম্মত’ হয়।

খালেদ মামুন চৌধুরী বলেন, “আমরা যে আলোচনা করলাম তা অব্যাহত থাকবে। আলোচনা এখনও শেষ হয়নি। প্রয়োজনে আমরা পরশুদিন আরেকটা মিটিং করব। সেই সিদ্ধান্ত আপাতত হয়েছে। একই সঙ্গে ২৩ তারিখ যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তা বহাল আছে।”

“আমরা মোটামুটি একটা সিদ্ধান্তে এসেছি। তবে সেটা শ্রমিকপক্ষ জানানোর পর আমরা আপনাদেরকে জানাতে পারব। এছাড়া আমরা এই মুহূর্তে তা ঘোষণা করতে পারছি না।”

তবে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, “মালিকপক্ষ ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা হাজিরা দিতে রাজি হয়েছে।”

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাহী উপদেষ্টা রামভোজন কৈরি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে চাই, আমরা মনে করি যে, উনাদের (মালিকদের) প্রস্তাবটা গ্রহণ করতে পারছি না। কিন্তু উনাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা বলেছি যে, কিয়ার কিছু বলতে হলে যারা লড়াইয়ে আছে, মাঠে আছে, যারা দৈনিক আড়াই কোটি টাকা মজুরি ত্যাগ করে মাঠে লড়াই করে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাদের সঙ্গে বুঝতে হবে। তারপরে আমরা আপনাদের বলতে পারব। সেজন্য একদিনের সময়ের বিষয়টা এসেছে।

“আমরা প্রত্যাশা করতে চাই, শ্রমিক যে একটা ন্যায্য মজুরির জন্য লড়ছে, আমরা বলছি যে, বর্তমান ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে মাত্র দুই কেজি চাল হয়। আমাদের ৩০০ টাকা মজুরির দাবিকে এখনও বলি যে যৌক্তিক। উনাদের (মালিকপক্ষের) একটা প্রস্তাব আছে, ৩০০ টাকার কম। আমরা বলছি যে, এটা আমরা মানতে পারব না।”

শ্রমিকদের আন্দোলন কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, “আমাদের একটা ওফার আছে তাদের কাছে। আমরা এখন কিছু বলতে পারব না। শ্রমিকনেতারা শ্রীমঙ্গল যাবেন। তারপর সিদ্ধান্ত জানাবেন। তারপরে বলব।

“তিনশ টাকা পাঁচশ টাকা বলে তো আমরা কোথাও যেতে পারব না। উনারা পারবেন না, আমরাও পারব না। আমরা ইন্ডাস্ট্রি চালাতে চাই, শ্রমিকদের উন্নতি চাই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে চাই। উনাদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের উঠাবসা। আমরা বিপদে-আপদের একসঙ্গে চলি।”

তিনি বলেন, “আজ যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশের স্বার্থে, শ্রমিকদের স্বার্থে সামাল দিতে হবে, এবং মালিকদের স্বার্থে। আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা অুনরোধ করেছি, ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যান, মজুরির বিষয়টা সমাধান করব আমরা নিজেরা।

“আমরা ৫০ বছর পেরেছি। তাহলে এখন কেন পারব না? আমাদের চা বাগানে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট লাগে। প্রতিবছর নতুন নতুন চারা লাগাতে হয়। এটাতে অনেক টাকা খরচ লাগে। আমি যদি একটা চারা লাগাই, কালকে চা ধরবে না। এটার জন্য ১২-১৩ বছর পর রিটার্নটা পাই। এটা বোঝার বিষয়।”

বৈঠক শেষে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ চা শ্রমিক পরিষদ সিলেট ভ্যালির সভাপতি এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজু গোয়ালা সাংবাদিকদের বলেন, তাদের মজুরি এখন ১২০ টাকা। তারা বৈঠকে মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবি করেছেন।

গত বছর জানুয়ারি থেকে তারা ৩০০ টাকা দাবি করে আসছেন জানিয়ে বলেন, দাবি না মানা হলে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।

মালিকপক্ষ কী চাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওনারা চাচ্ছেন ১৪ টাকা করে মজুরি বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা করে দেবেন। ওনারা শর্ত দিয়েছেন, আমরা যেন আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করি। তারপর ওনারা আমাদের বিষয়টা দেখবেন। কিন্তু আমরা ১৩৪ টাকায় রাজি হলে আন্দোলন করতাম না।

“ওনারা বলছেন দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে মালিপক্ষের ক্ষতি হচ্ছে, অথচ তারা একবারও ভাবেননি, শ্রমিকরা কীভাবে বেঁচে থাকবেন, এখানেই আমাদের কষ্ট। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা এখন সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। উনি আমাদের বিষয়টা বিবেচনা করে যা বলবেন, আমরা তাই মেনে নিব।”

আরও

Also Read: ভরা মৌসুমে শ্রমিক ধর্মঘটে শঙ্কায় চা বাগান

Also Read: কর্মবিরতির মধ্যে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে চা শ্রমিকরা