“এখনও দুই মাসের বেতন বকেয়া; এমনকি বোনাসও দেয় নাই। আমরা ঈদ করবো কীভাবে।?”
Published : 14 Jun 2024, 02:50 PM
বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
এ সময় মহাসড়কে আটকা পড়ে হাজার হাজার যানবাহন। ঈদ যাত্রায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা।
শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চান্দিনার বেলাশহর এলাকায় ‘ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট’ কারখানার শ্রমিকরা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
কারখানাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। শ্রমিকদের অবরোধের কারণে মহাসড়কের অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র গাড়ির জট তৈরি হয়।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম বলেন, “শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয়মুখী লেনে দীর্ঘ যাজটের সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা সরে যাওয়ার পর গাড়ি চলাচল শুরু করে।
“তবে দেড় ঘণ্টা গাড়ি আটকে থাকার কারণে এখন বেশ ধীরগতি রয়েছে।”
আবরোধ চলাকালে ডেনিম প্রসেসিং প্লান্টের শ্রমিকরা বলেন, তাদের কারখানায় প্রায়ই শ্রমিকদের বেতন আটকে রাখা হয়। ঈদের আগেও শ্রমিকরা দুমাসের বেতন আর ঈদ বোনাস পায়নি।
অবরোধ চলার মধ্যে প্রশাসনের লোকজন গিয়ে শুক্রবারের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের আশ্বাস দিলে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়ক থেকে সরে যান শ্রমিকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শ্রমিকরা অবরোধ শুরু করলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার কাবিলা থেকে দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত যানজট লেগে যায়। সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার যানবাহন আটকে থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষদের।
বেশি বেকায়দায় পড়ে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশগামী যাত্রী ও হাটের উদ্দেশে যাওয়া গরুবাহী ট্রাকের চালকরা।
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার বিদেশগামী যাত্রী বিল্লাল হোসেন বলেন, “বেলা ৩টার মধ্যে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে হবে। দ্রুত যাওয়ার জন্য প্রাইভেটকার ভাড়া করে এসেছি।
“কিন্তু লাভের লাভ কিছু হলো না; যানজটে আটকা পড়ে এখনও চান্দিনায় বসে আছি। কখন পৌঁছাতে পারবো, কিছুই বুঝতেছি না।”
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা গরুবাহী ট্রাকচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “গরু নিয়ে চট্টগ্রাম যাবো। কিন্তু যানজটে আটকে আছি।”
চট্টগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী শাহানা পারভীন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শ্রমিকরা চাকরি করেন গার্মেন্টেসে, যদি তাদের বেতন-বোনাস না দেওয়া হয় তাহলে তারা সেখানে বিক্ষোভ করবে।
“কিন্তু তারা মহাসড়কে উঠে লাখ লাখ মানুষকে কেন দুর্ভোগে ফেলেবে? মহাসড়কে চলাচল করা গাড়ির চালকরা কি তাদের বেতন দেবে? এসব ঘটনায় প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।”
আনোয়ার হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, “আমরা পেটের দায়ে পোশাক কারখানায় চাকরি করি। এখানে সবসময়ই বেতন আটকে রাখা হয়। মাসে ৯০ ঘণ্টা ওভারটাইম করলে অর্ধেক টাকা দেয়; বাকি ওভার টাইমের টাকা কেটে নেয় তারা।
“ঈদের মাত্র দুইদিন বাকি, এখনও আমাদের দুই মাসের বেতন বকেয়া। এমনকি বোনাসও দেয় নাই। আমরা ঈদ করবো কিভাবে।?”
অবশ্য শুক্রবারের মধ্যেই শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দিয়ে দেওয়া হবে বলে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা অনেক চেষ্টার পর শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়েছি। এ কাজে চান্দিনা থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে।”
এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে যানবাহনের জট লাগায় ধীরগতি রয়েছে বলে জানান ইউএনও।