শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় কুমুদিনী হাজংকে শেষ বিদায়

আজীবন যে সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখে গেছেন কুমুদিনী হাজং, তা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তার প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা, শ্রদ্ধা জানাতে চান সহযোদ্ধারা।

নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2024, 09:23 AM
Updated : 24 March 2024, 09:23 AM

ঐতিহাসিক টংক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহের অকুতোভয় সৈনিক কুমুদিনী হাজংকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় শেষ বিদায় জানিয়েছেন স্বজন-সহযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য কুমুদিনী হাজংয়ের মরদেহ বাড়ি থেকে সোমেশ্বরী নদীপাড়ে গ্রামের শ্মশানঘাটে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তার ছেলে অর্জুন হাজং।

এর আগে নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামের বাড়িতে কুমুদিনী হাজংয়ের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান, কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড মণি সিংহের ছেলে দিবালোক সিংহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পল্টন হাজংসহ শত শত মানুষ।

শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তার সহযোদ্ধারা বলছেন, আজীবন যে সাম্য সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখে গেছেন কুমুদিনী হাজং, সেই সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তার প্রতি প্রকৃত ভালবাসা, শ্রদ্ধা জানাতে চান তারা।

কুল্লাগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা উজ্জ্বল বলেন, “টংক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং আমাদের ইউনিয়নের গর্ব। তার মৃত্যুতে আমরা শোক জানাই। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।

বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তর হাজং বলেন, “এই কিংবদন্তীকে হারিয়ে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।”

কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিবালোক সিংহ বলেন, “কুমুদিনী হাজং এই দেশের কৃষক, মেহনতি মানুষ, জনতার স্বার্থের একটি সাম্যের সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখেছেন। সে লড়াই, সংগ্রাম, আন্দোলনের কর্মী ছিলেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন।

“আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনের তিনি যে সংগ্রাম করেছেন সেই সংগ্রামের মৃত্যু নেই, মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ একদিন প্রতিষ্ঠা হবেই।”

উপজেলা আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি অবস্তী কান্ত হাজং বলেন, “কমরেড কুমুদিনী হাজং একজন মহান নেত্রী। আমরা তার জীবন ও ইতিহাস সংরক্ষণে সরকারের কাছে দাবি জানাই।”

কুমুদিনী হাজংয়ের ছেলে অর্জুন হাজং বলেন, “মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তার আত্মার শান্তির জন্যে আপনারা সবাই প্রার্থনা করবেন।”

কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে টংক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয় দুর্গাপুরের হাজং সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এরই অংশ হিসেবে কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী লংকেশ্বর হাজং আন্দোলনে জড়িত হন।

১৯৪৬ সালের ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ পুলিশ বহেরাতলী গ্রামে হানা দিয়ে কুমুদিনী হাজংকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে রাশিমনি হাজংয়ের নেতৃত্বে পুলিশকে বাধা দেওয়া হয়। এ সময় কুমুদিনী হাজংকে নিতে না পারলেও পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রাশিমনি হাজং ও সুরেন্দ্র হাজংসহ কয়েকজন। সেই ঘটনার পর কুমুদিনী হাজংকে ঘিরে জ্বলে উঠে টংক আন্দোলন।

শনিবার দুপুরে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন কুমুদিনী হাজং। মৃত্যুর আগে জীবনের ৯২টি বছর অতিক্রম করেছেন আজীবন সাম্যের সমাজের স্বপ্ন দেখা এই মানুষটি। তিনি ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে গেছেন।