এলাকাবাসী জানান, এই মেয়র পদপ্রার্থী নিজেই বাইসাইকেল চালিয়ে নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে প্রতিদিন প্রচার চালাতেন।
Published : 22 Jun 2023, 12:33 AM
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের মাঠে চমক দেখিয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়া। নিজের সাইকেলে করে একা একা প্রচার চালিয়ে ভোটারদের মন জয় নিয়েছেন তিনি; পেয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট।
ফলাফল প্রকাশের পর সিলেটে এখন অনেকেই শাহজাহান মিয়াকে নিয়ে আলোচনা করছেন। যারা তাকে কোনোদিন দেখেননি তারাও তার ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা করছেন। জানতে চাচ্ছেন, কে এই শাহজাহান মিয়া।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ১৯০টি কেন্দ্রের সবকটিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলে। সন্ধ্যায় নগরীর জালাবাদ গ্যাস ভবনের অডিটোরিয়াম স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে ফল ঘোষণা শুরু করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের।
বেসরকারি ফলাফলে আনোয়ারুজ্জামান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট।
ভোটের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়া। তিনি মেয়র পদে বাস প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৬৮৮ ভোট।
সিলেট নির্বাচন কার্যালয় থেকে জানা যায়, মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে সম্পদ বিবরণী ও আয়কর রিটার্নের কপি জমা না দেওয়ায় শাহজাহান মিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। আপিল শুনানির আগে সম্পদ বিবরণী ও আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেওয়ায় তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান।
হলফনামা অনুযায়ী, শাহজাহান মিয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। সিলেট নগরের দরগাহ মহল্লায় একটি ভাড়াবাড়িতে থাকলেও তার আদি নিবাস ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলায়।
তার এলাকার বাসিন্দারা জানান, শাহজাহান মিয়া নিজেই বাইসাইকেল চালিয়ে নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে প্রতিদিন প্রচার চালাতেন। তার সহজ-সরল কথাবার্তা ভোটারদের মনে জায়গা করে নেয়।
অনেকেই গাঁটের পয়সা খরচ করে তাকে পোস্টার ও প্রচারপত্র ছাপিয়ে দেন। কিন্তু সেই পোস্টার লাগানোর মত কর্মীও ছিল না শাহজাহানের। প্রচারের মাঝে মাঝে তিনি নিজেই নিজের পোস্টার সাঁটাতেন।
এখনকার নির্বাচনে প্রচুর টাকা খরচ হয়। কিন্তু নিজের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় সে পথে হাঁটেননি তিনি। নগরীর কোথাও তার নিজের কোনো নির্বাচনী ক্যাম্প ছিল না। ১৯০টি কেন্দ্রের কোনো বুথেই তার কোনো কেন্দ্রে এজেন্টও ছিল না। তার একমাত্র সম্বল ছিল সাইকেল।
কয়েকজন ভোটার বলেন, সহজ-সরল শাহজাহানের কথা এবং তার একনিষ্ঠতার কারণে মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে। তিনি যাদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন তারাও তাকে আপন ভেবে ভোট দিয়েছে।
জানা যায়, শাহজাহান মিয়া প্রথমে ছিলেন হোটেল কর্মচারী ছিলেন। এরপর কিছু টাকা-পয়সা জমিয়ে তিনি নগরীতে মোমবাতি ও স্যালাইন বিক্রির কাজ শুরু করেন। তারপর সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি নেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে শাহজাহান মিয়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমি যখন সিলেট শহরে আসি, তখন মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে স্বপ্ন দেখি, একদিন এই শহরের মেয়র হব, এমপি হব, জনপ্রতিনিধি হব; এবং মানুষের সেই দুঃখ-দুর্দশা দূর করব।”
সেই আশা থেকেই এবার প্রার্থী হয়েছেন বলে জানান শাহজাহান মিয়া।
সিলেটে একজন মেয়র, ৪২ জন সাধারণ কাউন্সিলর, ১৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে এখানে ভোটের হার দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ।
এর আগে সিলেটে ২০০৮ সালে ভোট পড়ার হার ছিল ৭৫ শতাংশ। ২০১৩ সালে এ সিটিতে ভোট পড়ে ৬২ শতাংশ এবং ২০১৮ সালেও ভোটের হার ছিল প্রায় ৬৩ শতাংশ।