“মাদকের কামলা (মাদক বহনকারী শ্রমিক) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও মাদকের গডফাদাররা ধরা পড়েন না কেন?”
Published : 23 Jun 2024, 08:32 PM
কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে চোরাচালানে পুলিশ জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। একই সঙ্গে বর্তমান ওসি ‘গরুর মাথাপিছু রেট’ বাড়িয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির বলেন, “গরু আসে নদী পথে, গরু আসে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার উপর বাঁশের তৈরি আড়কির মাধ্যমে। মাথাপ্রতি গরুর টাকা নেয় কে এবং কে খায়? আগের ওসির এক রেট ছিল, এই ওসি এসে রেট বাড়ায় দেন (দিছেন)।”
শনিবার বিকালে রৌমারী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
তার বক্তব্যের চার মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভিডিও রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চায়ের দোকান থেকে হাট-বাজারের সব আড্ডায় আলোচনার মূল বিষয় হয়ে পড়ে।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য জাকির হোসেন বলেন, “এক সময় এ অঞ্চল মাদকের সাম্রাজ্য ছিল। আমার সময় বিজিবির ডিজিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে সচেতনতার মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কমিয়ে এনেছি।
“এখন মাদক নদী পথ দিয়ে ছোট ছোট মাছের ডিঙি নৌকাগুলোতে করে বিভিন্ন চরে আসে। পাশাপাশি উলিপুর উপজেলার চরেও বেশি দেখা যায়। পরে চরগুলো থেকে মাদক আবার রৌমারী এলাকায় আসে।”
সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রশন্ তুলেন, “মাদকের কামলা (মাদক বহনকারী শ্রমিক) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও মাদকের গডফাদাররা ধরা পড়েন না কেন?”
পুলিশের ‘বখরা নেওয়া ও মদদের’ কারণে গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এসব গডফাদারদের ইদানিং রৌমারী থানার বারান্দায় দেখা যায়। পাশাপাশি দারোগাদের গলা ধরি বেড়ান। এটা দৃষ্টিকটু। এগুলো বন্ধ করতে হবে।"
তিনি বলেন, মাদকের সাম্রাজ্য রৌমারী এবং মাদক কারবারিরা এখন কোটিপতি। গড়েছেন বহুতল ভবন। ব-কলম হয়েও শুধু টাকার জোরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রশাসন এসব বিষয়ে খোঁজখবর না রাখায় এবং আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
জাকির হোসেন বলেন, "আমি লক্ষ্য করেছি এখানে চুনোপুঁটিদের গ্রেপ্তার করা হয়। কারা হুন্ডি ব্যবসা করছেন সবাই জানেন কিন্তু বলেন না। তাই বলছি সাহস থাকলে আমাকেও গ্রেপ্তার করবেন যদি আমি জড়িত থাকি।"
“আমার মুখ-টুখ খোলাইয়েন না, ভালো হয়ে যাই সবাই। যার যা দোষত্রুটি আছে, নিজেরা ভালো হই। বেশি বেশি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না”, বলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
গরু ও মাদক বিষয়ে সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বক্তব্যের বিষয়টি জানতে চাইলে রৌমারী থানার ওসি আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, “বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পুলিশ কখনও সীমান্ত চোরাচালান কিংবা অন্য কোনো উপায়ে টাকা নেয় না।”
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট বিপ্লব হাসান পলাশ, রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু, ভাইস চেয়ারম্যান সামসুল দোহা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসিফ উদ্দীন মিয়া, রৌমারী থানার তদন্ত ওসি মুশাহেদ খান, রৌমারী বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার নায়েক সুবেদার আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ খোকা, বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সরকার, রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও স্থানীয় সাংবাদিকরা।