নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে খুলনায় সমাবেশ করছে বিএনপি।
Published : 22 Oct 2022, 01:08 PM
প্রথমে বাস বন্ধ, পরে লঞ্চও বন্ধ হল; এমনকি ফেরি আর খেয়াঘাটে নৌকা-ট্রলারও চলল না। সড়কে ইজিবাইক চললেও পথে পথে ছিল বাধা; এরমধ্যেই খুলনায় সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
শনিবার দুপুরের পর খুলনা সোনালী ব্যাংক চত্বরে এই সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী হেঁটেই সকালে পৌঁছে যান সেখানে। আর তারাই পথে পথে নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আসার কথা।
খুলনার কয়রা উপজেলার একটি দলের সঙ্গে কথা হয় সমাবেশস্থলে। আব্দুল আজিজ নামে ওই দলের একজন বলেন, একপ্রকার হেঁটেই আসতে হয়েছে। কিছুটা পথ ইজিবাইকে আসার পর তা আটকে দেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
তিনি বলেন, “এরপর নেমে হাঁটা শুরু করি। কিছু দূর আসার পর আবার ইজিবাইকে উঠি। কিন্তু আরেকটু আসার পর আবার ইজিবাইক থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আমরা হেঁটে আসতে পারলেও অনেকে হেঁটে আসতে পারছেন না। কাউকে কাউকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আবার কয়রার দিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
আজিজের অভিযোগ, খুলনার পথে পথে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, “আমি সারা শহর ঘুরে দেখেছি। এরকম কোনো ঘটনা আমার চোখে পড়েনি। পুলিশের পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কোনো দলের লোকজনও এ কাজ করছে না।”
বিএনপি নেতাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, “বাস-লঞ্চ বন্ধ করেছে মালিক সমিতি। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। বাস ও লঞ্চ বন্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগ কাউকে চাপ দেয়নি।”
খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা জানান, দুপুর ২টায় খুলনা নগরের ডাকবাংলো ও ফেরিঘাট মোড়ের মাঝামাঝি সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশ শুরু হয় চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
তিনি অভিযোগ করেন, সমাবেশে নেতাকর্মীদের আসা ঠেকাতে ‘সরকারের নির্দেশে’ বাস, লঞ্চ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। তারপরও মানুষ মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে সমাবেশে আসছে।
মনা বলেন, “দৌলতপুর, ফুলবাড়ি গেট, বয়রা বাজার ও নতুন রাস্তার মোড়সহ শহরের বিভিন্ন প্রবেশপথ ও মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ কোনো যানবাহনই খুলনায় প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না তারা। পায়ে হেঁটে প্রবেশের চেষ্টাকালেও তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং নানা ধরনের প্রশ্ন করে হয়রানি করা হচ্ছে।”
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুদরতই-আমির এজাজ খান বলেন, খুলনার বিভিন্ন উপজেলা এবং বিভাগের অন্যান্য নয়টি জেলা থেকে গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের আসা বাধাগ্রস্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে বাস-লঞ্চ, নৌকা-ট্রলার, ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরেও জনস্রোত ঠেকানো যাচ্ছে না।
এর মধ্যেই শনিবার সকাল থেকেই ভরে গেছে ডাকবাংলো ও এর আশেপাশের এলাকা। বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী ডাকবাংলো মোড়, ফেরিঘাট মোড়, খুলনা রেলস্টেশনের আশেপাশে অবস্থান নিয়েছেন।
রাতে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সমাবেশস্থলে থেকেছেন। কর্মসূচি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করবেন।
কুদরতই-আমির বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পরপরই অনেকে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছেন। সমাবেশ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তারা যে কোনো বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে সমাবেশ সফল করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
সমাবেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত মিডিয়া উপকমিটির আহ্বায়ক এহেতেশামুল হক শাওন বলেন, চাল-ডাল-তেল-গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, খুন-গুম, দুর্নীতি-দুঃশাসনের প্রতিবাদ এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, সংসদ বিলুপ্ত ও সরকার পতনের দাবিতে শনিবার খুলনায় বিএনপির তৃতীয় বৃহত্তর বিভাগীয় সমাবেশ ডাকা হয়েছে।
বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মঈন খান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও খুলনার গণসমাবেশের প্রধান উপদেষ্টা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তৃতা করবেন বলেও জানান মিডিয়া উপকমিটির আহ্বায়ক।