তৃতীয় দিনের মত বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়ার প্রধান দুই সড়কে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে পাশের দোকানপাট ও শপিংমল।
Published : 31 Oct 2023, 03:11 PM
আশুলিয়ায় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের। এই বিক্ষোভের কারণে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে অর্ধ শতাধিক কারখানায়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের আশুলিয়ার ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয় তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও ঘোষবাগ এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম
তৃতীয় দিনের মত শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়ার প্রধান দুই সড়কে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে সড়কের পাশের সমস্ত দোকানপাট ও শপিংমল। সড়কে থানা পুলিশের পাশাপাশি শিল্প পুলিশ-১, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ান, বিজিবি ও র্যাব সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকেরা কারখানায় উপস্থিত হয়ে তাঁদের হাজিরা নিশ্চিত করার পরপরই বের হয়ে পড়েন। এরপর তারা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে।
এ সময় পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকেরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে।
এ সময় শ্রমিকেরা বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পুলিশের ওপর থেমে থেমে হামলা করতে থাকেন।
বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে পলাশবাড়ী ও ইউনিক এলাকায়ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
শ্রমিকেরা নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে কাঠের টুকরো ফেলে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে।
তখন পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পলাশবাড়ী এলাকার স্কাইলাইন কারখানার শ্রমিক আরিফুর রহমান বলেন, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে বহিরাগত ২০-২৫ জন লোক লাঠিসোঠা হাতে তাদের কারখানায় প্রবেশ করে। তারা শ্রমিক পরিবহনের গাড়ি ও ট্রাক ভাঙচুর শেষে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলে যায়।
এই শ্রমিক জানান, হামলাকারীদের দেখে কারখানার শ্রমিক মনে হয়নি।
ইউনিক এলাকার ব্যবসায়ী শাহজালাল মিয়া বলেন, “আমরা সকাল-বিকেল দোকান বসাই। গত তিন দিন ধরে সকাল থেকে আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।
“এমন পরিস্থিতিতে দোকানে ক্রেতারাও আসে না। আর টিয়ারগ্যাসে নাক মুখ জ্বলে। ফলে ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।”
গামের্ন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, আন্দোলনের কারণে আশুলিয়ার ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, ঘোষবাগ ও পলাশবাড়ী এলাকার অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, “অধিকাংশ শ্রমিক শান্ত এবং নিরীহ। তারা কাজেও আসছে, অনেক কারখানায় কাজ চলছে। কিছু কিছু শ্রমিক উচ্ছৃঙ্খলতা প্রদর্শন করছে।”
তাদেরকে বিভিন্ন মহল থেকে ইন্দন দেয়া হচ্ছে, উস্কানো হচ্ছে দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা অলরেডি কিছু মহলের পরিচয় নিশ্চিত করেছি। উচ্ছৃঙ্খল যে শ্রমিক রয়েছে তাদেরকে এখান থেকে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছি। তারা যেন এখানে সহিংসতামূলক কার্যক্রমে না করতে পারে আমরা সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।”
এ ছাড়া শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে কিছু কিছু কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আবার কিছু কিছু আংশিক চলছে বলেও জানান তিনি।