যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলছেন, ‘গুজব আর আতঙ্কের’ কারণে এমনটি হয়েছে।
Published : 09 Jul 2024, 12:25 AM
যশোরের চৌগাছা উপজেলার একটি গ্রামে ছয় দিন আগে সাপের কামড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর একই গ্রামের আরও ১০ নারী ‘সাপে কামড়ের জ্বালা-যন্ত্রণা’ নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন।
তবে তাদের শরীরে সাপের কামড়ের কোনো চিহ্ন নেই; এমনকি তারা সাপ দেখেনওনি।
এ অবস্থায় যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলছেন, ‘গুজব আর আতঙ্কের’ কারণে এমনটি হয়েছে।
উপজেলার রানিয়ালি গ্রামের আব্দুল বিশ্বাসের স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে (৩০) গত ২ জুলাই সাপে কামড় দেয়। পরে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার মৃত্যু হয়।
এর পর থেকে গ্রামটিতে সাপ-আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রামটির অন্তত ১০ জন নারী সাপে কাটার কথা বলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে তাদের কেউই সাপ দেখতে পাননি।
রোববার রাত ১২টা থেকে রানিয়ালী গ্রামের নারীদের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি শুরু হয়। সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ জনে।
হাসপাতালে আসা নারীদের মধ্যে আছেন- রানিয়ালী গ্রামের অকূল মণ্ডলের কন্যা শ্রাবন্তী মণ্ডল (১৮), তাইজুল ইসলামের স্ত্রী রিপনা (৩০), উজ্জ্বল কুমারের স্ত্রী তমালিকা (২৮), মিঠুনের স্ত্রী প্রাপ্তি (২৭), কুমারেশের কন্যা রানিয়ালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী কেয়া (১৬), রাকিবুল ইসলামের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২০), সুফল মণ্ডলের স্ত্রী পল্লবী (৪৪), গৌতমের স্ত্রী রমা (৩০), বাবুর স্ত্রী অনিতা (৩০), মিলন মণ্ডলের স্ত্রী সুমিত্রা মণ্ডল (৫৫)।
তাদের কেউ বলছেন, টিউবওয়েলে গোসল করার সময় তাকে সাপে দংশন করে। কেউ বলছেন, রান্না করার সময়, আবার কাউকে ঘরে বসে থাকা অবস্থায়, কাউকে উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সাপে কামড় দিয়েছে বলে দাবি করছেন।
শরীরে সুচ ফোঁটানোর মত কামড়ের কথা বলছেন তারা দেয়। এতে প্রচণ্ড ব্যথা লাগে। এরপর শরীরে ঝিনঝিন কম্পন শুরু হয়। তারপর মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যাওয়া মত অবস্থা হয় তাদের। কেউ কেউ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।
চিকিৎসাধীন পল্লবী জানান, তার মাথায় যন্ত্রণা হয়। তখন মাথা ঘুরে পড়ে যান তিনি।
এ অবস্থায় স্বজনরা উদ্ধার করে তাদের যশোর ২৫০ শয্যার হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন।
তাদের মধ্যে অনিতাকে রোববার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তার দাবি, এদিন বিকালে ঘরে বসে থাকা অবস্থায় তাকে সাপে কামড় দেয়।
তবে ওইসব নারীদের মধ্যে একজনের হাতে সাপের কামড়ের মত দাগ থাকলেও অন্যদের শরীরে কোনো দংশনের দাগ খোঁজে পাননি চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, গুজবে আর আতঙ্কে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও চিন্তার। শরীরে সর্প দংশনের দাগ পাওয়া যাচ্ছে না অথচ রোগীরা বলছেন, তাদের সাপে দংশন করেছে। বিষের যন্ত্রণায় তারা ছটফটও করছেন। আবার বিষের তেমন তীব্রতা পাওয়া যাচ্ছে না। শরীরে বিষ না থাকলে প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনম রোগীকে দেওয়া যাবে না। তাতে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হারুন অর রশীদ বলেন, “তারা বলছেন, সাপে কেটেছে অথচ সাপ দেখতে পাচ্ছে না। আবার বলছে, ‘জ্বিন সাপে’ কামড়িয়েছে। এসব গুজব ও আতঙ্ক। আতঙ্কের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
“শরীরে বিষের তীব্রতা না থাকলে অ্যান্টিভেনম দিলে রোগী তো মারা যাবে। এখন যারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাদের কারও অ্যান্টিভেনম দেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।”
সাধারণ চিকিৎসায় তারা সুস্থ হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন হারুন অর রশীদ।
তিনি আরও বলেন, “তবে একই গ্রামের রাবেয়া বেগম হাসপাতালের চিকিৎসায় সুস্থতা ফিরে পাননি। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়নি।”