সিরাজগঞ্জে বিএনপির ১১শ নেতা-কর্মী মামলায়, গ্রেপ্তার ৭

আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা এসব মামলা দায়ের করেন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2022, 01:26 PM
Updated : 30 Nov 2022, 01:26 PM

সিরাজগঞ্জের আট থানায় পাঁচ দিনে আট মামলায় বিএনপির ১১ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন দলটির সাত নেতা-কর্মী।

আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা এসব মামলা দায়ের করেন বলে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ জানিয়েছে।

রায়গঞ্জ থানার ওসি আসিফ মোহাম্মাদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে ধানগড়ায় রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল আকন্দ বাদী হয়ে রাতেই ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।

তাড়াশ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার তালম ইউনিয়নের চার মাথা আকবর আলী বাজারে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোজ্জামেল হক মজনু বাদী হয়ে রাতেই ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ ১২০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

“রাতেই অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

সলঙ্গা থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে সলঙ্গা বাজারে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে রাতেই মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

উল্লাপাড়া থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে উপজেলার পূর্ণিমাগাতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও মোটরসাইকেল ভাংচুর এবং হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ বাদী হয়ে রাতেই মামলা করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৮০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।

এনায়েতপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে কেজির মোড়ে তাদের উপর হামলা ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় রাতেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আফাজ উদ্দিন ব্যাপারী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৪০ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

বেলকুচি থানার ওসি তাজমিরুল রহমান জানান, রোববার রাতে সাংগঠনিক কার্যক্রম শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার আদাচাকি এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপরে হামলা হয়। এ ঘটনায় সোমবার পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ আহম্মেদ উৎস বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

চৌহালী থানার ওসি হারুন অর রশিদ জানান, ২৫ নভেম্বর রাতে উপজেলার দত্তকান্দি বাজারে বিএনপি নেতা-কর্মীরা সভা করছিল। সেখানে সরকার বিরোধী বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মারপিট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুক বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১২০ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজন বিএনপিকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কাজিপুর থানার ওসি শ্যামল কুমার দত্ত জানান, সোমবার রাতে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার নিশ্চিতপুর এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আব্দুর রশিদ বিলু বাদী হয়ে মঙ্গলবার থানায় মামলা করেন। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজন বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা করে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে।

এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে গ্রেপ্তারদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

এর আগে ২২ নভেম্বর রাতে শাহজাদপুর উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়ন এবং সিরাজগঞ্জ সদরের পাইকপাড়ায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাংচুর এবং হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও দুটি মামলা হয়েছে।

শাহজাদপুরের মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জন অজ্ঞাতনামা এবং সদরের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়াও ১৮ নভেম্বর কামারখন্দ উপজেলায় বিএনপি নেতারা সমাবেশ শেষে ফেরার পথে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। থানায় দায়ের করা আওয়ামী লীগের মামলায় ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ জন অজ্ঞাতনামা বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুইজন বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

একই ঘটনায় আদালতে মামলা করেছে বিএনপি। এ মামলায় ৪০ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ জন অজ্ঞাতনামা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।