সকালে গাজীপুরের তিনটি কারখানার শ্রমিক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটির দুটি স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
Published : 28 Sep 2024, 05:44 PM
বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান, বন্ধ কারখানা খোলাসহ নানা দাবিতে গাজীপুরে তিনটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট তৈরি হলে যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।
শনিবার সকালে মহাসড়কটির দুটি স্থানে শ্রমিকরা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে কয়েক কিলোমটিার এলাকায় যানজট তৈরি হয়। পরে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে শিল্প পুলিশ জানায়।
এর মধ্যে গাজীপুর সদর উপজেলার মেম্বারবাড়ী এলাকায় সিলকন সুইং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকেই কাজে যোগ না দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বানিয়ারাচাল-ভবানীপুর (মেম্বারবাড়ী) এলাকায় বিক্ষোভ করেন। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার টানা বিক্ষোভে সড়কের উভয়পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বেলা ১২টার দিকে শ্রমিকদের সড়ক থেকে তুলে নেয় পুলিশ।
অপরদিকে এইচ আর ওয়ান ফ্যাশন লিমিটেড এবং এইচ আর ওয়ান অ্যাক্সেসরিজ কারখানার শ্রমিকেরা সকাল ৯টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দক্ষিণ সালনা (পলাশটেক) এলাকায় বিক্ষোভ করেন। পরে শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের বুঝালে তারা মহাসড়ক থেকে সরে গিয়ে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
সিলকেন সুইং লিমিটেডের ১৮ দফা
সিলকেন সুইং লিমিটেড কারখানার শ্রমিক কামাল হোসেন, নার্গিসসহ কয়েকজন আন্দোলনকারী অভিযোগ করেন, উৎপাদন ফ্লোরে প্রায়ই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুর্ব্যবহার ও হয়রানি করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর তারা ওইসব কর্মকর্তার অপসারণের দাবি জানান। তার সঙ্গে তাদের আরও কিছু দাবি ছিল।
দাবিগুলোর মধ্যে আছে- হাজিরা বোনাস ১০০ টাকা, রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করলে ৪০ টাকা টিফিন বিল, চাকরির বয়স ছয় মাস হলে ঈদ বোনাস, রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করলে ১০০ টাকা নাইট বিল, শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতি বছরের অর্জিত টাকা সময়মত পরিশোধ করা, শ্রমিকদের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য ছুটি দেওয়া, নারী-পুরুষ শ্রমিকদেরকে দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে, আন্দালনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা যাবে না, কর্মস্থলে মোবাইল ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে এবং ওয়েল ফেয়ার অফিসার লাভলী ইয়াসমীনসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ করতে হবে।
শ্রমিকদের দাবি, ১৬ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের পর কর্তৃপক্ষ দাবিগুলো মেনে কারখানা গেইটে একটি নোটিশ টানিয়ে দেয়। কিন্তু কাজে যোগদানের পর আন্দালনকারী শ্রমিকদের ছাঁটাই শুরু করে। তাছাড়া দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরকে অপসারণ না করে তাদেরকে পুনরায় কাজে নিয়ে আসে।
শ্রমিক কামাল হোসেন বলেন, “আমাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতারণা করেছে। আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েও মেনে নেয়নি। যে কারণে আমরা মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছি।”
শ্রমিক বিক্ষোভের ব্যাপারে জানতে চাইলে জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম বলেন, “অবরোধের কারণে সড়কের উভয় পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদের সব দাবি মেনে নিয়ে শ্রমিকেরা সড়ক থেকে সরে যায়। সাড়ে চার ঘণ্টা পর যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।”
পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে বলে জানান ওসি আব্দুল হালিম।
কারখানা খোলা ও তিন মাসের বেতনের দাবি
এদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা কারখানা খুলে দেওয়া এবং তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে এইচ আর ওয়ান ফ্যাশন লিমিটেড এবং এইচ আর ওয়ান অ্যাক্সেসরিজ কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন।
শ্রমিকরা জানান, সকালে কাজে এসে তারা কারখানার গেইটে বন্ধের নোটিশ দেখতে পান। তাদের তিন মাসের বকেয়া বেতন না দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রম আইনের ১৩/১ ধারায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বন্ধ ঘোষণা করে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, তারা মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারা জানান, তিন মাসের বেতন বকেয়া থাকায় তাদের ঘরভাড়া, দোকানের বাকি, বাচ্চাদের স্কুলের ও প্রাইভেট শিক্ষকের বেতনসহ অনেক ধারদেনা হয়ে গেছে।
এর মধ্যে হঠাৎ করে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখে মহাসড়কে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন জানিয়ে শ্রমিকরা বলেন, বৃহস্পতিবার তারা কাজ করেছেন। শুক্রবার কারখানায় সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। শুক্রবার রাতে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে চলে গেছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ফারুক আহমেদ বলেন, “শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করার খবরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদেরকে বুঝালে তারা সড়ক ছেড়ে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছে।”
এ ব্যাপারে জানার জন্য এইচ আর ওয়ান ফ্যাশন লিমিটেড এবং এইচ আর ওয়ান অ্যাক্সেসরিজ কারখানার মালিক হাতেমের মোবাইলে কলা করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।