হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের চণ্ডিছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা ছয় সপ্তাহ ধরে বেতন-রেশন পাচ্ছেন না।
Published : 27 Oct 2024, 10:04 AM
রেনু খাঁ বাউড়ির বয়স ৪০ ছুঁইছুঁই। স্বামী স্বপন বাউড়ি পৃথিবীর মায়া ছেড়েছেন অনেকদিন আগেই। ফলে বাগানে কাজ করে ছেলেমেয়েসহ ছয় জনের পরিবারকে একাই ভরণপোষণ করতে হয় এই চা শ্রমিককে।
রেনু কাজ করেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের চণ্ডিছড়া চা বাগানে। সেখান থেকে সপ্তাহে যে ‘হাজরি’ পান তাই তার বাঁচার অবলম্বন। প্রতি বৃহস্পতিবার তিনি সেই ‘হাজরি’র আশায় থাকেন। কিন্তু ছয় সপ্তাহ ধরে তার কোনো পারিশ্রমিক নেই। এই অবস্থায় সংসার নিয়ে ভীষণ বিপদের মধ্যে পড়েছেন তিনি।
রেনু খাঁ বাউড়ি বলছিলেন, “স্বামী নাই, যে সামান্য মজুরি পেতাম তাই দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতাম। কিন্তু এখন তাও বন্ধ হয়ে গেল। ছয় সপ্তাহ যাবত বেতন-রেশন না পাওয়ায় হাতে টাকাও নেই।
“বাজার থেকে কোনোরকমে আধা কেজি চিড়া কিনে এনে পরিবারের সবাই খেয়েছি। একবার খেলেও অন্যবারের কোনো ভরসা নেই আমার।”
তিনি বলেন, “বাগান কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের দ্রুত বেতন-রেশন না দেয় তাহলে আমরা না খেয়ে মারা যাব।”
একই অবস্থা চা শ্রমিক দুলন রিকি হাসনের। তার পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও তিন সন্তান। মজুরি না পেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
দুলন রিকি হাসন বলেন, “টানা ছয় সপ্তাহ ধরে আমাদের মজুরি বন্ধ। আমরা তো গরিব মানুষ। দিনে আনি দিনে খাই। এখন আমাদের পেট চলবে কী করে? আমরা নিজেরাই কী খাইমু আর সন্তানদেরই বা কী খাওয়াইমু।”
আরো কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েছেন চা শ্রমিক রিতা রঞ্জুর। মা আরতি রঞ্জু দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ। বেতনের টাকা না পাওয়ায় মাকে ওষুধ বা ভাল খাবার দিতে পারছেন না।
রিতা রঞ্জুর বলছিলেন, “খাবার না পেয়ে মা দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক চা শ্রমিক দিলীপ বলেন, “আমরা চা শ্রমিক বলে আমাদের পেট-পিঠ নেই? কাজ নেই, বেতন নেই! তাই বাগান থেকে গাছের ডাল সংগ্রহ করে ৫০-১০০ টাকায় বাজারে বিক্রি করে তা দিয়ে পরিবারের জন্য কোনো রকম চিড়া-মুড়ি সংগ্রহ করছি।
“কিন্তু চিড়া-মুড়ি খেয়ে এভাবে আর কত দিন চলব।”
আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করছেন এসব চা শ্রমিকরা। শুক্রবারও ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক অবরোধ করে পালন করছেন নানা কর্মসূচি।
চণ্ডিছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রঞ্জিত কর্মকার বলেন, “বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের বার বার শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু গেল ছয় সপ্তাহ ধরে আমাদের বেতন-রেশনসহ সবকিছু বন্ধ রয়েছে।
“দ্রুত সময়ের মধ্যে বেতন পরিশোধ না করলে মহাসড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন দেওয়া হবে।”
রঞ্জিত কর্মকার বলেন, “সামনে আমাদের কালীপূজা। ঘরে খাবার নেই। পূজা করব কিভাবে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত।”
চণ্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. সেলিমুর রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের চেষ্টা করছে। শিগগিরিই তাদের বেতন পরিশোধ করা হবে।”