যানজটের কারণে হাজারো শ্রমিক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের পায়ে হেঁটে পৌঁছেছেন গন্তব্যে।
Published : 02 Oct 2024, 01:54 PM
শ্রমিকদের অবরোধের মুখে তিন দিন ধরে বন্ধ রয়েছে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় একটি ব্যস্ততম মহাসড়ক। ৫০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সড়কে আটকে আছে অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক ও পরিবহন। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে ওই অঞ্চলের স্বাভাবিক কার্যক্রম।
পাওনা পরিশোধের দাবিতে বার্ডস গ্রুপ নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নবীনগর-বাইপাইল-চন্দ্রা মহাসড়কে এই অবরোধ শুরু করেন বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক।
দুই দিন পর বুধবারও শ্রমিকরা সেখানে অবস্থান করছেন। এই দীর্ঘ সময়েও আন্দোলনরত শ্রমিকরা তাদের পাওনা পরিশোধে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় সড়ক ছাড়ছেন না।
আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকেও গ্রহণ করতে দেখা যায়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
এদিকে তিন দিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কটিতে যানচলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সড়কটিতে চলাচলকারীরা। দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অসংখ্য যানবাহন আটকে আছে মহাসড়কটির প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে।
এর প্রভাবে আশপাশের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও যানজট ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিশমাইল থেকে নবীনগর পর্যন্তও তিন কিলোমিটার এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর থেকে শ্রীপুর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
যানজটের কারণে হাজারো শ্রমিক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের পায়ে হেঁটে পৌছেছেন গন্তব্যে।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লে-অফ ঘোষণা করা বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের সার্ভিস বেনেফিট ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দিন ধার্য করা ছিল গত সোমবার। কিন্তু মালিকপক্ষ কোনো ধরনের পাওনাদি পরিশোধ না করে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বরং তিন মাস সময় চেয়ে কারখানার গেটে একটি নোটিশ টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার সকালে পাওনাদি পাওয়ার আশায় কারখানায় গেলে নোটিশে আরও তিনমাস সময় চাওয়ার বিষয়টি দেখতে পায় শ্রমিকরা। পরে তারা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বুড়িরবাজার রোড এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্ডস গ্রুপের এক শ্রমিক বলেন, “আমাদের চুক্তির দিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিশ্বাসযোগ্য লোকজন ছিলেন। কিন্তু সেই চুক্তিও ভঙ্গ করলো মালিকপক্ষ।
“আমাদের অনেক শ্রমিক চাকরি না পেয়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। তারা বকেয়া পাওনাদির জন্য গ্রাম থেকে এসেছেন। এখন মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। আমাদের সবাইকে হতাশ করেছে। পাওনাদি না পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।”
সড়কে আটকে পড়া ট্রাকের চালক রহমত আলী বলেন, “শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাখছে তিন দিন ধরে। মালামাল নিয়ে দুই দিন ধরে যানজটে পলাশবাড়ী এলাকায় আটকে আছি। গাড়ির চাকা কোনো ভাবেই নড়ছে না।
“এমন এভাবে কতক্ষণ সড়কে বসে থাকা যায়? দুই দিন ধরে ভালোভাবে খাওয়া, গোসল আর ঘুম নাই। আমাদের দুর্দশা আর দুর্ভোগের কথা আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ভাবা উচিত। কারণ আমরাওতো তাদের মতোই শ্রমিক।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আর এত সময় ধরে শ্রমিকরা সড়ক বন্ধ করে রাখলেও সরকার কিংবা প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ কেন নিচ্ছে না, সেটাও বুঝতেছি না। পুলিশের কাউকেই দুই দিনে এখানে আসতে দেখিনি।”
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করেনি শ্রমিকরা। তবে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসবেন।”