চার দিন ধরে ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।
Published : 08 Aug 2024, 10:20 PM
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর গেল চার দিন ধরে দেশজুড়ে কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশের বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি।
সমন্বয় কমিটির দেওয়া ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বৃহস্পতিবারও দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে কবে নাগাদ তারা কাজে যোগ দেবেন সে বিষয়টি এখনও ‘অজানা’।
কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকা আন্দোলন থেকে শুরু করে শেখ হাসিনা সরকার পতন পর্যন্ত দেশজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা নিহতের পাশাপাশি অনেক পুলিশ সদস্য হতাহতের শিকার হয়েছেন।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে পুলিশ সদস্য নিহত এবং অনেকেই থানা থেকে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে সদ্য নিয়োগ পাওয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম দেশের সব পুলিশ সদস্যকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ১১ দফা দাবিতে সিলেট, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় কর্মবিরতি পালন করেছেন পুলিশ সদস্যরা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
নাটোর
১১ দফা দাবিতে বিকালে নাটোর পুলিশ লাইন্সে বিক্ষোভ সমাবেশে করেছেন কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা। এ সময় তারা পুলিশের বিসিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।
নাটোর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক কাজী জালাল উদ্দিন বলেন, “পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগদান করেননি, কারণ কাজের পরিবেশ নাই। যোগদান করতে বলা হচ্ছে, কিন্তু থানায় এখনও পোড়া লাশের গন্ধ, থানায় কোথায় এসে বসবে, চেয়ার টেবিল কোথায় কে সেটা পরিষ্কার করবে, যেটি নিশ্চিত হলাম না এখনও।
“বসার জায়গা তৈরি না করে বসতে বলেন, এটাত হয় না। পরিবেশ তৈরি হলে তখন বলতে পারব, সে পর্যন্ত আমরা অবশ্যই কাজে যোগদান করতে পারি না।”
সিলেট
সিলেট নগরীর মিরের ময়দান এলাকায় পুলিশ লাইন্সে বিক্ষোভ করেছেন জেলা ও মহানগর পুলিশের সদস্যরা।
কর্মবিরতি কর্মসূচির সমন্বয়ক কনস্টেবল মো. কামরুল ইসলাম রাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কর্মবিরতি চলছে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। দোয়া মাহফিলের পাশাপাশি নিহতের স্মরণে সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন তারা।
পুলিশ সদস্যরা কবে নাগাদ থানায় ফিরছেন এ বিষয়ে জানতে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের সাংবাদিকদের জানান, নগরের ছয় থানায় সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে কোতোয়ালি থানায় দুই থেকে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা বসিয়ে থানার কার্যক্রম আংশিক চালু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নরসিংদী:
কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির ডাকা কর্মবিরতির অংশ হিসেবে নরসিংদীতে কর্মবিরতি পালন করছে অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা।
বিকালে জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে এ কর্মসূচিতে জেলার ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
গত ১৫ বছরে অধস্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অন্যায়ের কথা তুলে ধরে তাদের শাস্তি দাবি করেন তারা।
বিক্ষোভ মিছিলে অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য দেন।
এ সময় নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম ফজল-ই-খোদা পলাশ (প্রশাসন ও অর্থ) এবং শামসুল আরেফিন (ডিএসবি) উপস্থিতি ছিলেন।
বাগেরহাট:
নবনিযুক্ত আইজিপির নির্দেশনার পরেও কাজে ফেরেননি বাগেরহাট জেলা পুলিশের সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার বিকালে দ্বিতীয় দিনের মত বাগেরহাট পুলিশ লাইনসে বিক্ষোভ মিছিল করেন পুলিশ সদস্যরা। বিক্ষোভে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে অংশ নেন পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ জেলার অন্যান্য কর্মকর্তারাও।
বিক্ষোভকারীরা পুলিশের অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক সংস্কারের ১১ দফা দাবি পূরণের আহ্বান জানান। তারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে করার সুযোগ চান। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে নিহত পুলিশ সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত ও পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের দাবি জানান।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “পুলিশের সদস্যরা যে নৃশংসতার শিকার হয়েছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সব পুলিশ সদস্য হত্যার বিচার করতে হবে। আমাদের ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তার সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করছি।”
পুলিশের ১১ দফা
# বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সকল পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের বিচার।
# বাংলাদেশ পুলিশ কোনো সরকার বা রাজনৈতিক দলের অধীনে কাজ করবে না; পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে জনগণের সেবা তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে।
# সারাদিন ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করানো যাবে না।
# অধস্তন কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোনো অবৈধ বা মৌখিক আদেশ পালন করবে না।
# অধস্তন কর্মচারীদের পদোন্নতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদোন্নতির মতো অবলম্বন করতে হবে।
# বাৎসরিক নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিন করাতে হবে।
# ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মত অধস্তন কর্মচারীদের সোর্স মানি দিতে হবে।
# বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে ১০ তারিখের মধ্যে টিএ এবং ডিএ বিল পরিশোধ করতে হবে।
# নতুন বেতন স্কেল প্রণয়ন করতে হবে।
# ঝুঁকি ভাতা বাড়াতে হবে।
# পুলিশ হেডকোয়ার্টারস থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যেকটি পুলিশ লাইন্স, থানা, ফাঁড়ি, গার্ড, ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করতে হবে।