১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে গুলিতে আহত হন শরীয়তপুরের মবিন হোসেন।
Published : 31 Aug 2024, 10:03 AM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে গুলিব্দ্ধি হয়ে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি ও এক কানের শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন শরীয়তপুরের মবিন হোসেন। অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ১৭ বছরের এই কিশোরের চিকিৎসা।
তিন থেকে চার লাখ টাকা হলে মবিন তার দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি ফিরে পাবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। এমন অবস্থায় দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন দোকান কর্মচারী মবিন।
মবিন শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সিধলকুড়া ইউনিয়নের বড় শিধলকুড়া গ্রামের প্রয়াত মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। গত ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরার রাজলক্ষ্মীর পাশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি।
পারিবারের সদস্যরা জানান, পাঁচ মাস আগে মবিনের বাবা মারা গেছেন। এরপর সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন মা নাজমা বেগম। তিন ভাইয়ের মধ্যে মবিনের ছোট ভাই প্রতিবন্ধী।
স্বজনদের পরামর্শে ও সহয়োগিতায় বড় ছেলে নাজমুল হুদা পলাশ ড্রাইভারের চাকরি ও মেজো ছেলে মবিন ঢাকার উত্তরার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজে যোগ দেয়। এতে চলে যাচ্ছিল তাদের সংসার।
১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো মবিন তার কর্মস্থল উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সড়কের ২৭ নম্বর প্লটে লতিফ অ্যাম্পেরিয়ামের মো. ওয়াসিম তালুকদারের কম্পিউটারের দোকানে যায়। সেই সময় রাজধানীজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তুঙ্গে।
দোকান বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দেয় মবিনও। মিছিলটি যখন উত্তরা থানার দিকে যায়, তখন থানার ভেতর থেকে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করতে থাকে। একপর্যায়ে একটি বুলেট মবিনের বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান কান হয়ে বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া ছররা গুলিতে তার দুই চোখসহ মাথায় আঘাত লাগে।
পরে আন্দোলনকারীরা মবিনকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করলেও এখনো মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অর্থাভাবে হাসপাতালে যেতে না পারায় এখন বাড়িতেই অবস্থান করছে মবিন।
দৃষ্টিশক্তি হারানো মবিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “সেদিন দোকানে ঢোকার কিছু সময় পরেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিল বের হয়। তখন দোকান বন্ধ করে ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেই।
“মিছিলটি থানার সামনে গেলে গুলিতে আমার কান ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর আমাকে প্রথমে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।”
চোখের দৃষ্টিসহ কানের শ্রবণশক্তি ফিরে পেতে আন্দোলনকারীসহ দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছে মবিন।
মবিনের বড় ভাই নাজমুল হুদা পলাশ বলেন, “ঘটনার দিন আমি বাড়িতেই ছিলাম। বেলা ১১টার দিকে আমার মোবাইল ফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। জানতে চায়, আমি মবিনের বড় ভাই কি-না? আমি তাকে ‘হ্যাঁ’ বলতেই তিনি বলেন, দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চলে আসুন।
“আপনার ভাই মবিন পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে আছে। এরপর দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে মবিনকে খুঁজে পাই। চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমার কাছে জমা এক লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে মবিনের চিকিৎসায়।
“এখন ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। সে শ্রবণশক্তিসহ দৃষ্টি ফিরে না পেলে প্রতিবন্ধী হয়ে যাবে। এক ভাই আগে থেকেই প্রতিবন্ধী, মবিনও যদি সুস্থ না হয় তাহলে পরিবারের বোঝা আরও বাড়বে। ডাক্তার বলেছেন, তিন থেকে চার লাখ টাকা হলে মবিন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।”
এমন পরিস্থিতিতে কোটা আন্দোলনকারী ও সরকারের কাছে মবিনের চিকিৎসায় এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছেন নাজমুল হুদা।
কান্না জড়ানো কণ্ঠে মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন, “মবিনের বাবা মারা যাওয়ার কয়েক মাসের মাথায় আল্লাহ আমার এ কী করল? আমার একটা ছেলে প্রতিবন্ধী। ওই এক ছেলেকে নিয়েই হিমশিম খেতে হয়।
“এখন আবার আন্দোলনে গিয়ে আরেক ছেলে চোখসহ কানের শক্তি হারিয়েছে। আমি দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে এখন কোথায় যাব? দেশবাসী যদি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করত, তাহলে বাঁচতে পারতাম।”