হাসপাতালের চারটি পানির মটর চুরি ও এনজিওর দেওয়া একটি প্ল্যান্ট নষ্ট হওয়া এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
Published : 06 Nov 2024, 11:04 PM
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী, স্বজন, চিকিৎসক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
হাসপাতাল থেকে পানির লাইনের চারটি মটর চুরি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া একটি পানির প্ল্যান্ট নষ্ট হওয়া এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্যামনগরের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান।
সংকট নিরসনে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী সাইফুল ইসলাম বলেন, স্যালাইন গুলে খাওয়ার মতও পানি নেই। প্রতিটি কাজের জন্য বাইরে থেকে স্বজনদের পানি আনতে হচ্ছে।
উপকূলের এই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীর স্বজনরা আশপাশের দোকান থেকে কিনে কিংবা অনেক দূর থেকে হেঁটে ফিল্টার ও বাসাবাড়ি থেকে বোতলে, বালতিতে করে পানি নিয়ে আসছেন। বিশুদ্ধ পানি না থাকায় রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে দাবি অনেকের।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে এতদিন একটি বেসরকারি এনজিওর দেওয়া প্লান্টের ওপর নির্ভর ছিল রোগী ও স্বজনরা। তবে সেটি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। রোগীরা প্রতিদিন তাদের কষ্টের কথা বলাবলি করেন। কিন্তু কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না।
উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের গুমানতলী এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সকিনা খাতুন জানান, হাসপাতালে ভেতরে পাইপের পানি আছে, তবে খাবার পানির কোনও ব্যবস্থা নেই। বাইরে একটি পানির ফিল্টার আছে তাও নষ্ট। তাই বাধ্য হয়ে পানি কিনে খেতে হয়।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকা থেকে হাসপাতালে এসেছেন মর্জিনা খাতুন।
তিনি বলেন, “দুই দিন আগে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। গত রাতে খাবার পানির দরকার। কিন্ত হাসপাতালের ভেতরে ব্যবস্থা না থাকায় পানি সংগ্রহ করতে পারিনি। পরে পাশে একজন কাছ থেকে পানি চেয়ে খেয়েছি। ভোরে বাসায় ফোন দিলে বোতলে করে পানি নিয়ে আসে।”
হাসপাতাল এলাকা থেকে চারটি পানির মটর অনেক আগে চুরি হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সমস্য সমাধানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে জানান সচেতন মহল।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, বেসরকারি একটি এনজিও (উত্তরণ) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানির প্ল্যান্টটি স্থাপন করে। এটি নষ্ট হওয়ার পর তারা আর মেরামত করতে আসেননি তারা। তাই খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে এক সপ্তাহ আগে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি হাসপাতাল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
“তবে তিনি এখনও ভিজিট করেননি। হয়ত দুই-একদিনের মধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এটা দেখা হবে।”
সুপেয় পানির সংকট নিরসনে স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থার নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শ্যামনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ লিয়াকত আলী বাবু।
শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জীব দাশ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন তিনি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।