একটি পক্ষ বলছে, নানা অভিযোগে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
Published : 03 Feb 2024, 05:51 PM
রাজশাহীর বাগমারায় ইজারা নেওয়া পুকুর দখল ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের বিরোধের জেরে এক যুবক খুন হয়েছেন। যিনি প্রতিপক্ষের হামলায় আহত তার সহকর্মীকে দেখতে ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার ঝিকড়া ইউনিয়নে মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রফিকুল আলম জানান।
নিহত সোহাগ আলী (২৪) যশোরের মনিরাপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
খবর পেয়ে রাতে বাগমারা থেকে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
ঝিকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক হোসেন বলেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা কৃষক লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলামের সঙ্গে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ ছিল।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আসাদুল দলীয় প্রার্থী পক্ষে কাজ করেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। এর জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তার দাবি।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সপ্তাহখানেক আগে ছুটিতে বাড়ি আসেন নজরুল ইসলামের ভাতিজা মোনোয়ার হোসেন। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে চাচার লিজ নেওয়া পুকুরের পাশে নিজের সরিষা ক্ষেতে যান তিনি।
এ সময় আসাদুল ইসলামের লোকজন মনোয়ারদের পুকুরপাড়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে বলে জানান। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা মনোয়ারকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন।
পরে মনোয়ারকে উদ্ধার করে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন।
মারধরের সময় আসাদুলের পক্ষের মুসলেম নামে একজনের নাক ফেটে যায়। এসব নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দিনভর উত্তেজনা ছিল।
স্থানীয়রা আরও জানান, এদিকে, মনোয়ার হামলায় আহত হওয়ার খবরে তাকে দেখতে ঢাকা থেকে আসেন চাচাতো ভাই ইমরান, তাদের সহকর্মী সোহাগ ও রনি। তারা প্রথমে সন্ধ্যায় আত্রাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মনোয়ারকে দেখেন। এর পর তারা রাত ৯টার দিকে আত্রাই থেকে একটি অটোরিকশা নিয়ে ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে যান।
তারা এলাকায় গেলে গ্রামে বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে নিয়ে আনা হয়েছে বলে প্রচার চালায় আসাদুল ইসলামের লোকজন। এ সময় উভয় পক্ষেই বাগমারা থানাসহ ভাগনদী ও ঝিকরা পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেয়।
তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই আসাদুলের লোকজন ডাঙ্গাপাড়া মোড়ে ইমরান, সোহাগ ও রনিদের ওপর হামলা চালায়।
মনোয়ারের চাচা নজরুল ইসলাম বলেন, এ সময় প্রতিপক্ষ অটোরিকশা চালকসহ তিনজনকে ঘরে আটকে রাখে। সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সোহাগকে মাঠের মধ্যে ধরে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
পরে পুলিশ গিয়ে প্রতিপক্ষের হাতে আটক তিনজনকে উদ্ধার করে নিজের হেফাজতে নেয় ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও আসাদুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি।
নজরুলের অভিযোগ, “সংসদ নির্বাচনের দিন বিকালে আমার ছোট ভাই সুজনকে মারপিট করে আসাদুল ইসলামের লোকজন। আমি ইজারা নিয়ে দুটি খাস পুকুরে মাছ চাষ করি। ভোটের পরের দিন আসাদুল নিজে আমাকে ওই দুই পুকুরে যেতে নিষেধ করেন এবং তারা মাছ মেরে বিক্রি করে দেন।”
তিনি আরও বলেন, “গত ২৬ জানুয়ারি আমার আরেক ভাই নুরুল ইসলামের সেচ মিশিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আসাদুল আমাদের বিলে নামতেও নিষেধ করেন। এ নিয়ে ওই দিনই থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”
নজরুল বলেন, খুনের রাতেও ঘটনার আগে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু সময় মত পুলিশ আসেনি।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বাগমারা থানার ওসি অরবিন্দ সরকার ফোন ধরেননি। কয়েকবার ফোন কেটে দেন তিনি।
তবে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রফিকুল আলম বলেন, “খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সেখানে যায় এবং স্থানীয় লোকজনের রোষানল থেকে এক সিএনজি চালকসহ তিনজনকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়।”
তিনি আরও বলেন, “তবে এর আগেই মাঠের মধ্যে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। নিহত সোহাগসহ তারা রাতে কেন গ্রামে আসেন এবং সেখানে কী ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”