২০১৬ সালে কুষ্টিয়া শহরের অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ওই গ্রাহক ৩০ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ছয় লাখ পরিশোধ করেছেন।
Published : 01 Dec 2024, 12:00 AM
কুষ্টিয়ায় এক গ্রাহকের খেলাপি ঋণের টাকা আদায়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। তবে এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ওই ঋণ গ্রহীতা।
শনিবার দুপুর ২টা থেকে শহরের কেরামত হোসেন মোস্তান রোডের ঋণ গ্রহীতা মোশারফ হোসেনের বাড়ির সামনে আধা ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জেলায় কর্মরত অগ্রণী ব্যাংকের সকল শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ঋণ আদায়ে সামাজিক চাপ সৃষ্টি করতে গ্রহীতার বাড়ির সামনে এমন কর্মসূচির দেওয়া হয়েছে; যাতে অন্য গ্রাহকরাও সতর্ক হন বলে জানান কুষ্টিয়া বড়বাজার শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) এনামুল হক।
তবে ঋণ গ্রহীতা মোশারফ হোসেন বলেন, সামাজিকভাবে তাকে হেয়-প্রতিপন্ন করতে ব্যাংকের লোকজন এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন; যা তারা কোনোভাবেই করতে পারেন না।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আট বছর আগে শহরের টালিপাড়া কেরামত হোসেন মস্তান সড়কের বাসিন্দা আব্দুল জলিলের ছেলে মোশারফ হোসেন বাড়ি নির্মাণের জন্য বড়বাজার অগ্রণী ব্যাংক শাখা থেকে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নেন। নির্ধারিত সময়ের পরও টাকা পরিশোধ না করায় তার বাড়ির সামনে এমন কর্মসূচি দেওয়া হয়।
মোশারফ হোসেন বলেন, “২০১৬ সালে ঋণ নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ছয় লাখ টাকা কিস্তি পরিশোধ করেছি। ইতোমধ্যে কিস্তির ১২ লাখ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করেছে। আমার ঋণ এখনও চালু আছে।
“অথচ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ফাইল-পত্র না দেখে বলতেও পারেননি, যে আমার কাছে তারা কত টাকা পাবেন। তাহলে উনারা আসলেন কেনো? এ ছাড়া আমি যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যমানের জামানত দেওয়া আছে।”
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চাইলে আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা নিয়ে নিতে পারেন; কিন্তু তারা সেই পথে না গিয়ে বিধি বহির্ভূত আচরণ করেছে বলে অভিযোগ করেন মোশারফ হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুল্লাহ জানান, শনিবার দুপুরে মোশারফ হোসেনের নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটা ব্যানার ধরে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান করেন।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, “এটি একটি ব্যতিক্রম কর্মসূচি। অনেক সময় দেখা যায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পর পরিশোধের সামর্থ্য থাকার পরও তা দিতে গড়িমসি করেন। এ ধরনের গ্রহীতাদের জন্য এটা একটা সামাজিক শিক্ষাও বলতে পারেন।”
অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সাবিনা সুলতানা বলেন, “সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার জন্যই এই উদ্যোগ। এ ছাড়া কিছু নয়। অথচ দুই একটা মিডিয়ায় আমার নাম কোট করে যে বক্তব্য ছেপেছে; যা আমি বলিনি।”
কুষ্টিয়া দেওয়ানী আদালতের আইনজীবী মীর নাজমুল ইসলাম শাহীন বলেন, শনিবার অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একজন ঋণ গ্রহীতার বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করেছে; যা আইন বহির্ভূত। কোনো ব্যাংকই বিধি বহির্ভূত এমন কাজ করতে পারেন না।”