ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
Published : 11 Aug 2023, 08:07 PM
কুমিল্লার চান্দিনায় ‘স্বামী-স্ত্রীর পরিকল্পনায় এক যুবক খুন হয়েছেন’; যুবকটির সঙ্গে নারীটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে দাবি পুলিশের।
গত বুধবার উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের ছাড়াগাঁও এলাকার একটি পুকুর থেকে ওই যুবকের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মো. আরিফ হোসেন (৩০) একই উপজেলার সাতগাঁও গ্রামের আলাই মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন।
ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ওয়াহিদপুর এলাকা থেকে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গাবুরগাঁও গ্রামের ফাতেমা বেগম (২৮) ও তার স্বামী শুক্কুর আলী।
তাদের গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
এ নিয়ে শুক্রবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. নাজমুল হাসান।
সেখানে মো. নাজমুল হাসান জানান, গত বুধবার চান্দিনার মাইজখার ইউনিয়নের করতলা গ্রামের ছাড়াগাঁও এলাকার একটি পুকুর থেকে আরিফ হোসেনের বস্তাবন্দি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই তারিছ আলী বাদী হয়ে চান্দিনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পরে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য এবং তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তারদের কুমিল্লা আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার স্বামী-স্ত্রীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে নাজমুল হাসান জানান, ১০ বছর আগে শুক্কুর আলীর সঙ্গে ফাতেমা বেগমের বিয়ে হয়। তাদের চারটি সন্তান আছে। শুক্কুর আলী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। একই পেশার সুবাদে তার সঙ্গে আরিফের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। বাড়িতে আসা-যাওয়ার সুবাদে আরিফের সঙ্গে শুক্কুরের স্ত্রী ফাতেমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এ অবস্থায় এক মাস আগে পালিয়ে চান্দিনায় আরিফের ভাড়া বাসায় চলে আসেন ফাতেমা। সেখানে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে এক মাস থেকে ফাতেমা বুঝতে পারেন, আরিফ তাকে বিয়ে না করে প্রতারণা করছেন। তখন ফাতেমা মোবাইল ফোনে স্বামী শুক্কুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এছাড়া আরিফের সঙ্গে চলে যাওয়ার জন্য ফাতেমা স্বামীর কাছে অনুতপ্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হাসান আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা স্বীকার করেন, তারা আরিফকে ‘উচিৎ শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সোমবার (৭ অগাস্ট) রাতে চান্দিনায় আরিফের ভাড়া বাসায় আসেন শুক্কুর আলী। আরিফ বাসায় না থাকার সুযোগে তিনি খাটের নিচে লুকিয়ে থাকেন। রাতে আরিফ বাসায় এসে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে খাটের নিচ থেকে বের হয়ে আসেন শুক্কুর। তিনি লোহার শাবল দিয়ে আরিফের মাথায় আঘাত করেন। এ সময় আরিফকে বালিশ চাপা দেন ফাতেমা। এভাবে তাকে খুন করার পর স্বামী-স্ত্রী মিলে লাশ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বিছানার চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে ওই বাসার পাশের পুকুরে ফেলে পালিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দাউদকান্দি সার্কেল) এনায়েত কবীর সোয়েব, চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.সাহাবুদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।