“কাশেম বড় হয় দাদি আলেক জানের কাছে। তিনি মারা যাওয়ার পর কাশেম একা হয়ে যায়।”
Published : 13 Feb 2025, 05:39 PM
গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য মো. আবুল কাশেমের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুর রাজবাড়ি ময়দানে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ড বাজার সংলগ্ন আল হেরা সিএনজি পাম্পের মাঠে আরেকটি জানাজা শেষে কাশেমকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে ফুফু নাসিমা বেগম জানান।
এর আগে বুধবার বিকালে ১৭ বছর বয়সী আবুল কাশেম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। কাশেমের বাড়ি গাজীপুর বোর্ডবাজার এলাকায়, তার বাবা মৃত জামাল হাজী।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করে ছাত্র-জনতা।
আবুল কাশেমের ফুফু নাসিমা বেগম বলেন, “কাশেমকে দেড় বছর বয়সে রেখে তার মা রেখা বেগম রেখে অন্য জায়গায় চলে যান। আজ পর্যন্ত তার মায়ের দেখা নেই। পরে তার বাবা জামাল হাজী উদ্দিন চিশতি আবার বিয়ে করে।
“আর কাশেম বড় হয় দাদি আলেক জানের কাছে। তিনি মারা যাওয়ার পর কাশেম একা হয়ে যায়। পাঁচ বছর আগে তার বাবাও মারা যান। স্কুল পড়ুয়া বোন সুইটি চাচার কাছে থাকে।”
তিনি বলেন “কাশেম একাই থাকতো বাবার রেখে যাওয়া দেড় কাঠার একটি বাড়িতে। সেখানে তিনটি ঘর ভাড়া দিয়ে একটিতে সে নিজে থাকতো। নিজেই রান্না করে খেতো। পাশাপাশি স্থানীয় অনুশীলন প্রি ক্যাডেট একাডেমিতে অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো সে।
“পড়ালেখায় অনিয়মিত থাকলেও শ্রমিকের কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে উপার্জন করতো। এতেই তার সংসার চলতো।”
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কাশেম বোর্ডবাজার এলাকায় ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে ছিল। ছাত্ররা যেখানেই আন্দোলনের ডাক দিতো, সেখানেই যে চলে যেত।”
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় পতিত আওয়ামী সরকারের সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পৈত্রিক বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় অন্তত ১৭ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে ৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে আবুল কাশেমও ছিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার মাথায় কোপানো হয়েছিল। গত শুক্রবার রাতে আমরা আর অস্ত্রোপচার করি। এরপর তাকে পোস্ট অপারেটিভ থেকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
“কিন্তু সেখানে তার সেপ্টিসেমিয়া ডেভেলপ করে। জ্বর কমে না, প্রেসার কমে যাচ্ছিল। আজ সাড়ে তিনটার দিকে সে মারা যায়।”
মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পরদিন ৮ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গাজীপুরের আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ মোহিত বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা নামের আওয়ামী লীগের এক কর্মী।
এ মামলায় সোমবার রাত পর্যন্ত ১৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান।
এদিকে কাশেমের মৃত্যুর খববে শহরে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা। মিছিলটি শহরের বিবাড়ি মোড় থেকে শুরু হয়ে শিববাড়ি মোড়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হয়ে রাজবাড়ি সড়কে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।