“রাতের মধ্যে দাবির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানানো হলে আমরা অবস্থান কর্মসূচিতে বসবো না।”
Published : 04 Jun 2024, 08:43 PM
আপগ্রেডেশন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের দাবিতে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।
মঙ্গলবার উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম যথারীতি চালু ছিল।
এর আগে রোববার শিক্ষক সমিতি সদস্যরা উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ অবস্থা নিরসনে পাঁচ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চলমান সমস্যা নিয়ে কাজ করবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়া।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় সাত-আটজন শিক্ষক দাঁড়িয়ে আছেন। উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুবের দপ্তরের দরজায় তালা ঝুলছে। সহ-উপাচার্য সৈয়দ সামসুল আলমের কক্ষেও তালা।
কিছু সময় পর বেলা পৌনে ১টায় শিক্ষক সমিতির সাত-আটজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের (নিবন্ধক) কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। ১৫ মিনিট পর তারা ওই কক্ষ থেকে বের হন।
এ সময় তারা জানান, সোমবার দীর্ঘ সময় উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, মঙ্গলবার বেলা ১১টার মধ্যে এ বিষয় নিয়ে কাজ করবেন। তাই সকাল থেকে আন্দোলন হয়নি। রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আবার কথা হয়েছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত অগ্রগতি না হলে বুধবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত তালা ঝুলবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান বলেন, “শিক্ষক সমিতির সদস্যরা আমার কার্যালয়ে এসেছিলেন। কথা হয়েছে। আমরা তাদের বিষয় নিয়ে কাজ করছি। চলমান যে সমস্যা নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী দাবি করছেন সে বিষয়ে রিজেন্ট বোর্ড হচ্ছে আমাদের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
“আপগ্রেডেশনের জন্য যারা আবেদন করেছেন আমাদের কাজ হচ্ছে রেজুলেশন করে রিজেন্ট বোর্ড সদস্যদের কাছে আবদেনগুলো পাঠানো। আমরা এরই মধ্যে রেজুলেশনে অন্তর্ভুক্তি করেছি। উপাচার্য স্যার ঢাকা থেকে ফিরলে এগুলো পাঠানো হবে।”
আপগ্রেডেশন বা ডিউ ডেট সম্পর্কে তিনি বলেন, “আপগ্রেডেশনের বিধান বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে। কোভিডের দুই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত উপাচার্য ছিল না। তখন চলতি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চলতি দায়িত্বে থেকে কোনো উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো সভা আহ্বান করতে পারেননি। ওই সময়ে যে সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল তারা তা পাননি, এ কারণে ডিউ ডেটের দাবি করছেন।”
রেজিস্ট্রার বলেন, “কোভিডকালে যারা পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন প্রাপ্ত হয়েছেন ওই দুই বছর রিজেন্ট বোর্ড গণনা করবে না। এদিকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই দুই বছর সময় গণনা করে তাদের আপগ্রেডেশন চাচ্ছে। এখানে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
“যেমন একজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে হলে তাকে সহকারী অধ্যাপক পদে একাধারে চার বছরের চাকরি করতে হবে কোভিডকাল বাদ দিয়ে।”
তিনি বলেন, “যারা আপগ্রেডেশনের জন্য আবেদন করেছেন তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ৩৯তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় পাঁচ সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
দলিলুর রহমান বলেন, এ কমিটির সদস্যরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. শাহাজান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপার্চার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার ও মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস। কমিটির সদস্যরা যাচাই-বাছাই করে রিজেন্ট বোর্ডে প্রতিবেদন দেবেন। সদস্যরা পরবর্তী বোর্ড সভার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফায়েকুজ্জামান মিয়া বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিকাল ৪টা পর্যন্ত আমাদের অগ্রগতি জানায়নি। আমাদের সিদ্ধান্ত সকাল ৯টা থেকে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। আর রাতের মধ্যে দাবির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানানো হলে আমরা অবস্থান কর্মসূচিতে বসবো না।”
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষক (একজন অধ্যাপক, ৭০ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং দুই শতাধিক সহকারী অধ্যাপক) আপগ্রেডেশন পেয়েছেন।
আপগ্রেডেশন পর তারা যে পদ পাবেন, বর্তমানে সে পদের বিপরীতে অন্য শিক্ষক আছেন। অর্থাৎ পদটি আপাতত শূন্য নয়। এ অবস্থায় নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বা নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে একই আপগ্রেডেশন পুনরায় করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
এ কারণে বর্তমানে প্রায় ৩০ জন শিক্ষকের আপগ্রেডেশন বন্ধ রয়েছে।