“তিস্তা নদীর একটি শক্তিশালী বাঁধ দিলে হামার এমন অবস্থা হইল না হয়।”
Published : 01 Jul 2024, 04:53 PM
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, সোমবার সকালে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপরে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে পাঁচ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। ভাঙনকবলিত পরিবারের অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতি সরিয়ে নিচ্ছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল সূর্যমূখী ক্বারী মাদরাসা, চিলাখাল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ ও উত্তর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাদি বলেন, তার ইউনিয়ন ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের অন্তত ৫ শতাধিক ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। সেখানে নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট।
ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “দুই সপ্তাহ ধরি তিস্তা নদীর পানি বাড়ে আবার কমে। হামার এত্তি ভাঙন দেখা দিছে। ঘরবাড়ি নিয়ে অনেক বিপদে আছি। এ্যালা পানির জন্তে কোনটেও যাবার পারো না।
“একদিকে পানি বাড়ে, আরেকদিকে আবার ভাঙতেছে। এই বানোত ঘরবাড়ি টিকবার পামো কিনা আল্লায় জানে।তিস্তা নদীর একটি শক্তিশালী বাঁধ দিলে হামার এমন অবস্থা হইল না হয়।”
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, তিস্তা নদী এলাকায় বন্যা ও ভাঙনের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, “অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই।”
তিস্তা নদী তীরবর্তী কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে দুর্ভোগের আতঙ্ক রয়েছে। নদী তীরবর্তী আবাদি জমিগুলো তলিয়ে গিয়ে বাদাম ও শাক-সবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসল নিয়ে নদীপাড়ের মানুষ বিপাকে রয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, “ডালিয়া ব্যারাজের সব গেট খুলে রাখা হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ কিছুটা বাড়ছে। এছাড়া ভাটি অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়র পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।”