নেইমারদের প্রশংসা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে বাংলায় ধন্যবাদ দিতে ভুললেন না রেদে রেকর্ডের হয়ে কাতার বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক।
Published : 08 Dec 2022, 01:33 PM
‘কোন দেশ থেকে এসেছো?’, পৌঢ় লোকটির প্রশ্ন শুনে লাইভ দেওয়ার জন্য মোবাইল ঠিক করতে করতে তাকায়। বলি ‘বাংলাদেশ’। তিনি আরও কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকান। ভাঙা-ভাঙা ইংরেজিতে বলেন, ‘পর্তুগিজ বলতে পার?’ ‘না’ উত্তর শুনে শুরতে একটু হতাশ হন। এরপর থোমো রবের্ত আগুস্তো নামের ওই বয়স্ক লোকটি বলেন, “তাহলে ইংরেজিতেই বল ব্রাজিল কেমন খেলেছে, এক্সপ্রেশনটা দিও ভালোমতো।” শেষ কথাটি শুনে এবার আমিই বিস্মিত! ‘এক্সপ্রেশন’ কীভাবে ভালো হবে, সেটা ভেবে আকুল!
কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে স্রেফ খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়েছে ব্রাজিল। সপ্তম মিনিটে সেলেসাওদের ভয়ঙ্কর সুন্দর ফুটবলের শুরু ভিনিসিউস জুনিয়রের গোল দিয়ে। এরপর সফল স্পট কিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করনে নেইমার। রিশার্লিসন, লুকাস পাকেতার গোল দুটি মুগ্ধতা ছড়ানো। কেবল গোলগুলো নয়, প্রথমার্ধে দেখা মিলেছে আনিন্দ্যসুন্দর ব্রাজিলের।
রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়ার জন্য যা যথেষ্ট, কিন্তু ‘রিপোর্টার’ তো আর ‘সাপোর্টার’ নয়, অঙ্গভঙ্গিতে কীভাবে ব্রাজিলের সুন্দর ফুটবল ফুটিয়ে তোলা যায়, কিছুক্ষণ ভাবতে থাকি। রেদে রেকর্ডের হয়ে কাজ করা আগুস্তো এবং তার সঙ্গে ক্যামেরা তাক করে দাঁড়িয়ে থাকা গনসালভেস ফিলিপে এনরিকে তাকিয়ে থাকেন সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায়।
বৈশ্বিক ফুটবলে বাংলাদেশ সবচেয়ে পেছনের বেঞ্চের ছাত্র। কিন্তু ব্রাজিলের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এই দেশটি অচেনা নয় মোটেই। আর্জেন্টিনা, দিয়েগো মারাদোনা ও লিওনেল মেসিকে নিয়ে এই দেশটির মানুষের উন্মাদনার খবর কদিন আগে দিয়েছে আর্জেন্টিনার গণমাধ্যম। এখন তাদের পত্রপত্রিকায় ছাপাও হচ্ছে ক্রিকেটর খবর, আফিফ-মেরাজদের ছবি।
ব্রাজিল, পেলে, নেইমারকে নিয়েও বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ, ভালোবাসা কম নয় একটুও। বিশ্বকাপ এলে অল্প-স্বল্প ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড কিংবা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর কল্যাণে পর্তুগাল বাদে বাকিরা বিভক্ত হয়ে যায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়। ইন্টারনেটের এই যুগে সুদূর বাংলাদেশের মানুষের নেইমার, ভিনিসিউস জুনিয়র কিংবা রিশার্লিসনদের নিয়ে মাতামাতি, হাতাহাতির খবর তাই রিও দে জেনেইরোতে পৌঁছুতে সময় লাগে না এখন। কিন্তু আমার দুর্ভাবনা ‘এক্সপ্রেশন’ ভালো দেওয়া নিয়ে! এদিকে নেইমারদের নিয়ে লাইভ দেওয়ার তাড়া!
এই তাড়াহুড়োর মধ্যে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিলাম ব্রাজিলকে। ক্যামেরাম্যান এনরিকে মনে হয় খুশি হননি ‘এক্সপ্রেশন’ দেখে! এরপর কিছুক্ষণ লাইভের ব্যস্ততার ভিডিও করে চলে যান। যাওয়ার সময় পিঠ চাপড়ে বলে যায় ‘ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।’ ব্যস্ততার মধ্যেও ব্রাজিলিয়ানের মুখে বাংলা শুনে অবাক হাই। মুখ তুলে তাকাতেই উস্কখুস্কো চুলের এনরিকে আবারও বললেন ‘ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।’
পর্তুগিজে ভাষায় ‘ধন্যবাদ’-এর বিপরীতে কি বলতে হয় কি জানি না। আমিও তাই ‘ধন্যবাদ, ধন্যবাদ’ বলি আরও বেশি আন্তরিকতা নিয়ে। মনে হয়, এবারের ‘এক্সপ্রেশনটা’ ঠিকঠাক হয়েছে নিশ্চিত! ভিনদেশি, ভিন্ন ভাষাভাষীদের যেন এভাবেই এক সুতোয় বেঁধে দেয় ফুটবল বিশ্বকাপ।