সাইপ্রাসের ট্রাফিক আইনে হয়রান!

আমরা বাঙালিরা মনে করি, শুধু আমাদের দেশের ট্রাফিক আইনই জনগণকে হয়রানি করে, বাকি সব দেশের ট্রাফিক আইন অনেক ভালো। কথাটা ঠিক না।

মাহাফুজুল হক চোধুরী, সাইপ্রাস থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2017, 08:32 AM
Updated : 16 Nov 2017, 08:36 AM

এটা সত্য যে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর ট্রাফিক আইন অনেক শক্তিশালী। কিন্তু এই শক্তিশালী ট্রাফিক আইন অনেকসময় ভোগান্তিও তৈরি করে। সাইপ্রাসের ট্রাফিক ব্যবস্থা দিয়েই উন্নত বিশ্বের ট্রাফিক আইনের একটা চিত্র তুলে ধরছি।

বাংলাদেশে শহরাঞ্চলগুলোতে স্বল্প সংখ্যক ট্রাফিক সিগন্যাল থাকলেও সেগুলোর কোনো কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। ট্রাফিক সিগন্যাল থাকা সত্ত্বেও প্রতিটা মোড়ে মোড়ে তিন-চারজন করে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত, তবুও কেউ আইন মানছে না। যে যেদিকে পারে, একটু সুযোগ পেলেই অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চালায়।

জনগণের এমন আইন ভাঙ্গার কারণে আমাদের দেশের ট্রাফিক পুলিশরাও অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। ট্রাফিক আইনে ধারার কোনো শেষ নেই বললেই চলে। তারপরও এত ধারা কে পালন করে? না পালন করে দায়িত্বরত পুলিশ, না পালন করে জনগণ।

একবার আমি বাংলাদেশে এক ট্রাফিক পুলিশকে জিজ্ঞেশ করেছিলাম, “আচ্ছা ভাই, আপনারা দুর্নীতি করেন কেনো? ট্রাফিক মামলার টাকা তো সরকারের পাওয়ার কথা, অথচ সেই টাকা আপনাদের পকেটে ঢুকিয়ে নিজেরা বিলাসিতা করছেন? সরকার তার বড় একটা আয়ের উৎস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না?”

পরে ওই ট্রাফিক পুলিশ আমাকে উত্তর দিলো, “পুলিশের চেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ তো পাবলিক, নইলে আপনারা জানেন যে পুলিশ দুর্নীতি করছে, তারপরও আপনারা আমাদেরকে মামলা না দেওয়ার জন্য পেছনে টাকা দেন কেনো?”

এইবার আসি সাইপ্রাসের কথায়। সাইপ্রাসে কোনো ট্রাফিকেই পুলিশ নেই। এখানে ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজন পড়ে না। রাস্তার প্রতিটা জায়গায় যেখানে যেখানে প্রয়োজন, সব জায়গায় ট্রাফিক লাইট দেওয়া আছে। সেই ট্রাফিক লাইটের সিগন্যাল অনুযায়ী সবাই গাড়ি চালায়।

এখানে কেউ নিয়ম ভঙ্গ করে না। তারপরও কিছু কিছু চালক আছে, তারা একটু এদিক-সেদিক সুযোগ পেলেই উলটোপথে গাড়ি ঢুকিয়ে দেয়। বিশেষ করে এশিয়ান চালকরাই এসব বেশি করে।

অন্যান্য দেশের মতো এখানকার ট্রাফিক সিগন্যালগুলো তেমন ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত নয়। তবে ট্রাফিক আইন অমান্য করে ছাড় পাওয়ার সুযোগ কম। কারণ, রাস্তায় সবসময় পুলিশ টহলে থাকে।

কেউ যদি কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে, আর আশপাশ থেকে যদি কোনো পুলিশ তা দেখে ফেলে, তাহলে সাথে সাথে ওই ব্যক্তিকে টার্গেট করে পুলিশের সাইরেন বাজবে। সেটা শোনার সাথে সাথে ওই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে যায়। পরে তার অপরাধ অনুযায়ী তাকে মামলা দেওয়া হয়।

তবে এক্ষেত্রে কিছুটা বাংলাদেশের সাথে মিল আছে। তাদের ট্রাফিক আইনে লেখা আছে, সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চালালে জরিমানা হবে ৫০ ইউরো, মানে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু তারা মামলা দেয় একশ’ থেকে দেড়শ’ ইউরো।

এখানেও সরকার থেকে দেওয়া একটা কমিশনের ব্যবস্থা আছে। সেটার জন্য মামলা দেওয়ার সময় টাকার পরিমাণ বেশি করে দেয়। তবে এখানে মামলা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানকার পুলিশ পাবলিক থেকে সরাসরি টাকা পকেটে ঢোকাবে, সে সুযোগ নেই। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সাইপ্রাসের সরকার বিশাল অঙ্কের টাকা এই ট্রাফিক পরিবহন খাত থেকে নেয় বলে শুনেছি।

গত কয়েকদিন আগের কথা। সারা সাইপ্রাসে প্রতিটা জায়গায় প্রতিদিন শুধু গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করে করে মামলা দিচ্ছে বিভিন্ন জনকে। প্রতি জনকে একশ’ থেকে পাঁচশ’ ইউরো পর্যন্ত, যা বাংলায় প্রায় ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত!

সেদিন আমি কাজ থেকে রাতে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ দেখি আমাকেও সিগন্যাল দিলো পুলিশ। আমি জানি যে আমার গাড়ির কাগজপত্র সবকিছুই ঠিক আছে, আমাকে মামলা দেবে কেনো। কিন্তু তারা আমাকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ১৬০ ইউরো মামলা দিয়ে দিলো। কোনো কথা বলারও সুযোগ দিলো না।

পরদিন দেখি নিকোশিয়া টাউনে যত গাড়ি ধরেছে, সবাইকে মামলা দিয়েছে। এই দেশের কাউকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, কিছুই করার নেই। সরকারের টাকার দরকার, তাই তারা এসব করছে! এই কারণে এখন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতেও অনেকেই ভয় পাচ্ছে।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!