প্রবাসের চিঠি: সাইপ্রাসের গ্যাস, তুরস্কের জাহাজ

আমি সাইপ্রাসে আড়াই বছর ধরে আছি ছাত্র ভিসায়। এর মধ্যে সাইপ্রাস ছাড়া এখনও কোথাও যাওয়া হয়নি। তাই ভাবলাম, এইবার কোথাও বেড়াতে যাব।

মাহাফুজুল হক চৌধুরী, সাইপ্রাসের নিকোশিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2017, 09:12 AM
Updated : 15 July 2017, 09:27 AM

সেদিন সকালে কলেজে গেলাম ‘হলি ডে’ পেপারের জন্য।  কলেজের অফিস সহকারীকে বললাম, “আমি দুবাই যাব বেড়াতে। আমার হলি ডে পেপার দরকার।”

ভাবছেন, ‘হলি ডে’ পেপার কী?

‘হলি ডে’ পেপার হচ্ছে সাইপ্রাস থেকে অন্য কোনো দেশে ঘুরতে বা বেড়াতে যাওয়ার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা ছুটির নোটিসপত্র।

যাই হোক,অফিস থেকে আমাকে হলি ডে পেপার দেওয়ার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করলো। কিন্তু পরে চেক করে দেখলো যে, আমার বকেয়া ব্যালেন্স আছে সাতশ’ ইউরো। সেজন্য আমাকে হলি ডে পেপার দিচ্ছে না।

বকেয়া টাকা পরিশোধ করলে আমাকে হলি ডে পেপার দেবে ওরা। আমিও নাছোড়বান্দা। বললাম, প্রয়োজনে কোথাও যাব না, তবু বকেয়া টাকা এখন দেব না। এভাবে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অফিসে বসে আছি ঘাড়ত্যাড়া করে।

পরে বুঝলাম, বকেয়া পরিশোধ করা ছাড়া হলি ডে পেপার দেবে না। তখন দুষ্টামি করে আমি তাদেরকে বললাম, বেড়ানোর জন্য দুবাই না গিয়ে আমি তুর্কি যাব,তুর্কি যাইতে হলি ডে পেপার লাগবে না।

এইবার তারা এই কথা শোনার সাথে সাথে রেগেমেগে আগুন। আমি যেন কখনোই তুর্কি না যাই! তারপর বলল, “ঠিক আছে। বকেয়া টাকা পরে দিও, হলি ডে পেপার নিয়ে যাও। কিন্তু তুর্কি যেতে পারবে না।”

এবার হলিডে পেপার নিয়ে চলে আসলাম। তবে মূল বিষয় হচ্ছে, সাইপ্রাস যেভাবে তাদের শত্রু রাষ্ট্র তুরস্ককে ঘৃণা করে, পৃথিবীতে আর কোনো রাষ্ট্র সেইভাবে তাদের শত্রু রাষ্ট্রকে ঘৃণা করে কিনা আমার জানা নেই। কেউ যদি সাইপ্রাসের কোনো লোককে বলে, তুরস্ক ভালো,তাহলে সাইপ্রাসের ওইলোক গুলি করে আপনাকে মেরে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করবে না।

এখন সাইপ্রাসের সাথে তুরস্কের আবার নতুন করে শত্রুতা শুরু হলো। গত কিছুদিন আগে সাইপ্রাস তাদের সাগরের পাশে গ্যাসের সন্ধান পায়। গ্যাস উত্তোলন করার জন্য তারা যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে। এমন সময় তুরস্ক এসে বলছে, ওইখান থেকে তাদেরকেও অর্ধেক ভাগ দিতে হবে। তা নাহলে গ্যাস উত্তোলন করতে দেবে না।

এইদিকে সাইপ্রাস সরকারের দাবি, তারা তুরস্ককে গ্যাস দিতে রাজি, যদি তুরস্ক সাইপ্রাস থেকে যে অংশ কেটে নিয়ে গেছে, ওইখান থেকে কিছু অংশ আবার ফেরত দেয়! কিন্তু তুরস্ক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, তারা সাইপ্রাসকে কোনো অংশই ফেরত দেবে না। আবার গ্যাসের ভাগও তারা চায়।

সাইপ্রাসের টিভিতে সংবাদ দেখে জানতে পারলাম,সাইপ্রাসের যে অংশে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়, সেইখানে তুরস্কের তিনটি বড় বড় জাহাজ টহল দিচ্ছে। এ নিয়ে সাইপ্রাসে নতুন করে শুরু হয়েছে আতঙ্ক।

অন্যদিকে সাইপ্রাসের পক্ষে গ্রিস তুরস্ককে হুমকি দিয়েছে, যদি তারা সাইপ্রাসে হামলা চালায়, তাহলে গ্রিস তুরস্কে হামলা চালাবে। যদিও আমরা জানি, বর্তমান সময়ে গ্রিস তুরস্কের কাছে কিছুই না। তুরস্ক ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোনো দেশকে পাত্তা দেয় না। তারপরও গ্রিস এবং সাইপ্রাস ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ হওয়ায় সাইপ্রাসে হামলা চালানোটা তুরস্কের জন্য কঠিন ব্যাপার তো বটেই।

তবে ঘটনা যাই ঘটুক, এতে আমাদের লাভ-লোকসান কোনোটাই নাই। তবুও আমি যেহেতু সাইপ্রাসে আছি, তাই সাইপ্রাসের পক্ষেই আমার ভোট থাকবে।

লেখক: প্রবাসী বাংলাদেশি

এই লেখকের আরও পড়ুন