সহিংসতা ‘কম’ হলেও নির্বাচনের মানে সন্তুষ্ট হয়নি এনডিআই-আইআরআই

প্রতিবেদনে বলা হয়, “নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ের পরিবেশকে তুলে ধরা যায় বাড়তি রাজনৈতিক মেরুকরণ, রাজনৈতিক দলের সহিংসতা, নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন এবং মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতার বাজে অবস্থা দিয়ে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2024, 01:55 PM
Updated : 17 March 2024, 01:55 PM

বিরোধীদের অনুপস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এবারের জাতীয় নির্বাচনে আগের তুলনায় সহিংসতা কম হলেও ‘মান ক্ষুণ্ন হয়েছে’ বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শনিবার প্রকাশ করা দুই প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

তাদের প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, “এবারের নির্বাচনের মান বাংলাদেশের অতীতে যে কোনো নির্বাচন তুলনায় উন্নত ছিল। এনডিআই-আইআরআই কী বলল বা না বলল, এতে কিছু আসে যায় না।”

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৮ থেকে ১১ অক্টোবর বাংলাদেশে যৌথভাবে একটি প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন (পিইএএম) প্রতিনিধিদল পাঠায় আইআরআই ও এনডিআই।

তাদের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে নির্বাচনের প্রচার, ভোটের দিন এবং ভোটের পরে আরেকটি কারিগরি মূল্যায়ন মিশন (টিএএম) পাঠায় সংস্থা দুটি। ২০ ডিসেম্বর থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই মিশনের পর্যবেক্ষণের আলোকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

এনডিআই-আইআরআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়, “২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়ে অতীতের তুলনায় ‘কম শারীরিক ও অনলাইন সহিংসতার’ ঘটনা ঘটেছে।

“এটা প্রধানত দেশব্যাপী দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনুপস্থিতি এবং নির্বাচনের নিরাপত্তার বিষয়ে রাষ্ট্রের বাড়তি নজর দেওয়ার কারণে।”

তারপরও নির্বাচনের ‘মান ক্ষুন্ণ হওয়ার’ পর্যবেক্ষণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “রাষ্ট্রীয়, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধীদের সহিংসতার কারণে জানুয়ারির নির্বাচন মানের ক্ষুণ্ন হওয়া দেখতে পেয়েছে টিএএম।

“পাশাপাশি নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ের পরিবেশকে তুলে ধরা যায় বাড়তি রাজনৈতিক মেরুকরণ, রাজনৈতিক দলের সহিংসতা, নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন এবং মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতার বাজে অবস্থা দিয়ে।”

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও সমমনারা। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিলেও তাদের অবস্থান এমন নয় যারা সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে।

ফলে কম ভোটার উপস্থিতির নির্বাচনে সহজ জয় পেয়ে ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ।

নির্বাচন প্রতিহত করতে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি ও সমমনারা টানা আন্দোলন করেছে। তবে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে সেসব কর্মসূচির প্রভাব ছিল সীমিত।

এনডিআই-আইআরআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, “অনেক অংশীজন অভিযোগ করেছেন যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিষেবা এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান বার বার অসমভাবে নির্বাচনি বিধি প্রয়োগ করেছে।

“বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার এবং বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত বা ব্যাহত করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা সন্তোষজনক ও ন্যায়সঙ্গত ছিল না এবং এর ফলে নির্বাচনকালীন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সম্পর্কে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের ধারণা তৈরি হয়েছিল।”

অ-রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিদের দ্বারা নির্বাচনী সহিংসতা দুইভাবে ঘটেছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, যার প্রথম রূপটি ছিল প্রার্থী এবং সমর্থকদের প্রতিযোগিতার মধ্যে।

নির্বাচনি এলাকায় সহিংসতা সাধারণত আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ছিল উল্লেখ করে বলা হয়, “যদিও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সাবেক প্রার্থীদেরও টার্গেট করা হয়েছে। ”

সহিংস ঘটনা হিসেবে সমর্থকদের গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ, প্রচার মিছিলে হামলা, প্রচার কার্যালয় ধ্বংস বা অগ্নিসংযোগ, মৌখিক হুমকি, এবং ভাঙচুর বা সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “সহিংসতার দ্বিতীয় রূপটি চালিত হয়েছিল বিরোধীদের বয়কট প্রচেষ্টার দ্বারা। যদিও বিরোধী দল ধারাবাহিকভাবে অহিংসার আহ্বান করেছে, নির্বাচন ঠেকাতে এর সমাবেশ, অবরোধ এবং ধর্মঘটের কৌশলের কথা বলেছে।

“তারপরেও অগ্নিসংযোগ, শারীরিক হামলা, ভাঙচুর, ভীতি প্রদর্শনসহ সহিংসতা মাঝে মাঝে ঘটেছে এবং একজন পুলিশ অফিসারের মৃত্যুও ঘটেছে।”

তাদের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে রোববার এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “এনডিআই-আইআরআইর প্রতিবেদনে তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, এই নির্বাচনে দেশে অন্যান্য সময়ে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই নির্বাচনের তুলনায় অপেক্ষাকৃতভাবে অনেক কম সহিংসতা হয়েছে।

“আর মানের কথা বলছেন? দেখুন, বাংলাদেশে যে সমস্ত নির্বাচন ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে বা আমাদের উপমহাদেশে যে নির্বাচনগুলো হয়, সেই তুলনায় এই নির্বাচনের মান অনেক উন্নত এবং একটি সুন্দর, ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন এনডিআই-আইআরআই কী বলল বা না বলল, এতে কিছু আসে যায় না।”

এনডিআই-আইআরআইয়ের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটাকে প্রত্যাখ্যান করার বা গ্রহণ করার বিষয় নয়। তারা প্রতিবেদন দিয়েছে, আমরা প্রতিবেদনটা দেখছি এবং আমরা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র বা অন্য কেউ যে সমস্ত পর্যবেক্ষণ দিচ্ছে, সেগুলো আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি।”