যুক্তরাজ্য থেকে এসেছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, তিন আমেরিকান জন হপকিনস ইউনির্ভাসিটি স্কুল অব মেডিসিনের চিকিৎসক।
Published : 24 Oct 2023, 08:45 PM
বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি না মেলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিদেশ থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসা হচ্ছে।
এরই মধ্যে একজন যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসে পৌঁছেছেন, বুধবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছেন আরও তিন জন।
এই চার জনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি, তবে তিনি ইংল্যান্ডে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত। বাকি তিন জনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
এই চিকিৎসকদের সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমাদৃত বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।
তিনি জানান, বিদেশি চিকিৎসক নিয়ে আসার এই উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলও এতে সায় দিয়েছে।
বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অন্য একজন চিকিৎসক জানান, মঙ্গলবার সকালে ইংল্যান্ড থেকে এসেছেন একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি একজন প্রবাসী বাংলাদেশি যিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত। দুপুরের পর তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখেও এসেছেন।
মঙ্গলবার বিকালে আসবেন একজন এবং রাতে আসবেন দুই জন। এরা হলেন: আসবেন হামিদ রব, ক্রিস্টোস জর্জিয়েডস এবং জেমস পি এ হ্যামিলটন।
তারা সবাই জন হপকিনস ইউনির্ভাসিটি স্কুল অব মেডিসিনের ‘স্বনামধন্য’ চিকিৎসক জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, “তিনজনই নেফ্রোলজি, হেপাটোলজি এবং ইন্টারনাল রেডিওলজি, লিভার-কিডনি ট্রান্সপারেন্ট বিভাগের হাইলি এক্সপার্ট।
“তারা ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) করেন বা এ রকম (লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত) রোগী ম্যানেজ করেন, যেটি ম্যাডামের জন্য জরুরি।”
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় দেশে গঠিত মেডিকেল বোর্ড দুইবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসায় টিপস জরুরি। কিন্তু দেশে এটি করার মতো বিশেষজ্ঞ এবং যন্ত্রপাতি নেই।
অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘‘ম্যাডামের অবস্থায় অত্যন্ত খারাপ ছিল। সিসিইউতে নেয়া হয়েছিল। আজকে দুপুর ১২টার মধ্যে আবার কেবিনে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন বিশ্রামে আছেন।”
গত ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন বিএনপি নেত্রী। গত আড়াই মাসে কয়েক দফা তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
৭৮ বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও হদরোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে এখন লিভার সিরোসিসের অনেক জটিলতা আছে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, পেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বারবার বুকে পানি চলে আসছে।
হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড চিকিৎসার বিষয়ে সার্বিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
গত ৯ অক্টোবর বোর্ডের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, “দেশে চিকিৎসার সব অপশন শেষ হয়ে এসেছে।”
সেদিন তিনি বলেন, “‘টিপস ইমিডিয়েট দরকার। কিন্তু এই টিপস বাংলাদেশে হয় না। এটা হলে উনার বুকে যে পানি আসছে এটা চলে যাবে, রক্তক্ষরণ হবে না।”
বিদেশি চিকিৎসকরা এই টিপসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের এক জন সদস্য।
বিএনপি এবং স্বজনরা চেয়েছিল খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হবে।
তবে একাধিকবার সরকার ‘আইনে সুযোগ নেই’ জানিয়ে আবেদন নাকচ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা স্থগিত হওয়ার পর ২০২২ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য বাসায় ফেরেন। এরপর সাময়িক এই মুক্তির মেয়াদ আরও আট বার বাড়ানো হয়েছে।
সেই মুক্তির দুটি শর্তের মধ্যে একটি ছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। তবে ২০২১ সালের শেষে পরিবারের পক্ষ থেকে তার ‘জীবন সংকটে’ জানিয়ে বিদেশে নেওয়ার জন্য সুযোগ চেয়ে আবেদন করা হয়। সে সময় বিএনপি একই দাবিতে রাজপথে টানা কর্মসূচি পালন করে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে তখনও বলা হয়, দেশে চিকিৎসার সব সুযোগ শেষ হয়ে গেছে। বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্তে দেরি হলে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে সে সময় বক্তব্য আসে তাদের নেত্রী ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’।
সে সময় প্রায় তিন মাস হাসপাতালে থেকে খালেদা জিয়া বাসায় ফেরেন। এবার তিনি আবার হাসপাতালে আড়াই মাস ধরে।
গত ৯ অগাস্ট হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সরকারের কাছে আবার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে আবেদন করা হয়। এবারও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইনের যে বিধান ব্যবহার করে তার সাজা স্থগিত করা হয়েছে, সেটি দুইবার ব্যবহারের সুযোগ নেই।
বিদেশে যেতে চাইলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়ে আদালতে আবেদন করতে হবে অথবা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে ১০ অক্টোবর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিদেশি চিকিৎসক নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। সেদিন তিনি বলেন, “বেগম জিয়া যাতে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা পান, সেজন্য সরকার আন্তরিক এবং যত ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন সেটি করছে এবং প্রয়োজনে আরও করবে। বাইরের ডাক্তার আনার প্রয়োজন পড়লে তাও তারা আনতে পারেন।”