সবাইকে লোকমা তুলে খাওয়ানো যাবে না, নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেমন ট্রেইনিং দিয়েছে, র‌্যাব তেমন কার্যক্রম করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2022, 03:16 PM
Updated : 6 Oct 2022, 03:16 PM

আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চাইলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ না এলে সরকার কিছু ‘চাপিয়ে দিতে’ পারে না।

বৃহস্পতিবার গণভবনে এক সাংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধান বলেন, "রাজনীতি করতে হলে দলগুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবে। হ্যাঁ, আমি অবশ্যই চাই সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কারণ এতদিন কাজ করার পর নিশ্চয় আমরা চাইব, সবাই নির্বাচনে আসুক।"

বর্তমান সরকারের অধীনে ‘সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্ভব নয়’ অভিযোগ করে বিরোধী দলের একটি অংশ নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে।

বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে তারা নির্বাচনে যাবে না।

গত নির্বাচনের আগে বিএনপি ও সমমনাদের পাশাপাশি সব দলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবারও সেরকম চায়ের দাওয়াত দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সেই প্রশ্ন একজন সাংবাদিক রেখেছিলেন।

করোনাভাইরাসের বিষয়ে সতর্কতার কারণে 'এবার একটু চিন্তা করতেই হবে' মন্তব্য করে শেখ হাসিনা আগের নির্বাচনের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন।

"গতবার যে সবার সাথে বৈঠক করলাম, আলোচনা করলাম, এরপর নির্বাচনে দেখা গেল, ৩০০ সিটে ৭০০ নোমিনেশন দিয়ে যখন নিজেরা হেরে গেল, তখন সব দোষ কার? আমাদের।"

বিরোধীরা ‘ভোট প্রভাবিত করার’ অভিযোগ করে এলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের কাজ করে তাদের মন জয় করেই বার বার ভোটে জয় আসছে তার দলের। 

"আওয়ামী লীগ কখনও কোনো মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বের হয়নি, কারও ক্ষমতা দখল করেও আসেনি। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবার ভোটের মাধ্যমেই, নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে।

“এই নির্বাচনে দেশের যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার, সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট করে সবাইকে নিয়েই আমরা করে দিয়েছি। তারপরেও যদি কেউ না আসে, সেখানে আমাকে কী করণীয়?  

“একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাওয়ায় দিতে হবে, জিতিয়ে দিতে হবে, তবেই আসব- এটা তো হতে পারে না। মিলিটারি ডিকটেটরটা এভাবেই করেছে। তারা তো জনগণের কাছে যেতেই ভয় পায়। জনগণের সামনে ভোট চাইতে গিয়েও ভয় পায়। এটা তো বাস্তবতা।"

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "যারা অগ্নি সংযোগ করে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের মানুষ ভোট দিতে পারে না। সেই পোড়া ঘা তো এখনও শুকায়নি। এখনও অনেকে কষ্ট পাচ্ছে। আমরা চাই সব দল আসুক। নির্বাচন করুক। কার কতটা যোগ্যতা আছে, সেটা দেখা যাক। অন্তত আওয়ামী লীগ কখনও ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে নাই। জনগণের ভোটে নির্বাচনে এসেই ক্ষমতায় এসেছে।"

সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে 'সরকার পতনের রূপরেখা' তৈরির পাশাপাশি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও বৈঠক করছে বিএনপি।

ক্ষমতার পরিবর্তনে বিদেশি দূতাবাসের ভূমিকা নিয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চান শেখ হাসিনার কাছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয়, এটা বিএনপির কাছে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয় যে, নির্বাচনটা কে করবে? বিএনপি ভুলে গেছে তাদের অতীতের কথা। একটি মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বিএনপির সৃষ্টি। আর তারপরে নির্বাচনের যে প্রহসন, সেটা তো তাদেরই সৃষ্টি।

"বরং আমরা নির্বাচনটাকে এখন জনগণের কাছে নিয়ে গিয়েছি, ছবিসহ ভোটার লিস্ট হচ্ছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেওয়া হচ্ছে এবং মানুষ যেন তার ভোটটা দিতে পারে, ভোট সম্পর্কে মানুষের যে সচেতনতা, সেটা আমরাই সৃষ্টি করেছি। আর বিএনপি ধর্না দিয়ে বেড়াচ্ছে।"

জনসমর্থন থাকলে বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধর্না দিয়ে বেড়াত না মন্তব্য করে তিনি বলেন, "খুঁটায় যদি জোর থাকত, অর্থাৎ শিকড়ে যদি জোর থাকত, তাহলে তো বিদেশে ধর্না দেয়ার প্রয়োজন হত না।

"তারা কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে? আগুন দিয়ে পোড়ানো, মানুষ খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা- তারা ভোট চাইতে গেলে কী জবাব দিবে? আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। যত আন্দোলন করবে, যত সংগ্রাম করবে, ততই ভাল। কিন্তু পারে না তো, কী করব?