একটি জাতীয় দৈনিককে সিপিবির সাবেক সভাপতি বলেছিলেন, তারা সম্মেলন করে দলের নেতৃত্বকে সরিয়ে দেবেন।
Published : 26 Feb 2024, 10:46 PM
শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে প্রবীণ রাজনীতিক মনজুরুল আহসান খানের বিরুদ্ধে আবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি।
তাকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পদ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে; দলের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে ছয় মাসের জন্য।
সিপিবির নেতৃত্বকে সরিয়ে দিতে সম্মেলনের পরিকল্পনা করার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় বক্তব্য দেওয়ার নবম দিনে এমন সিদ্ধান্ত এল।
সোমবার সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সভাপতি শাহ আলমের সভাপতিত্বে সভা শেষে দলের পক্ষ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সদস্য পদ স্থগিত থাকার সময় মনজুরুলের বিরুদ্ধে নতুন কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে আবার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সেই সভায় বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
তবে সিপিবির সাবেক সভাপতি ঠিক কী করেছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী, এসব বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে কিছু বলা হয়নি।
এতে দলের শৃঙ্খলা, রীতিনীতি ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার যে কোনো পদক্ষেপ ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে সারাদেশের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
পরে যোগাযোগ করা হলে দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনার (মনজুরুল) বিষয়ে আমাদের দলের মধ্যে নানান সময় নানান অভিযোগ ছিল। সবশেষ গত ১৭ তারিখে তিনি একটি পত্রিকায় যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাতে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও কেন্দ্র সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছেন, সেটা গঠনতন্ত্র বিরোধী ছিল বলে নেতৃবৃন্দ মনে করেছেন। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
প্রিন্স বলেন, সেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্যের বিষয়ে মনজুরুলকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। তিনি যে জবাব দিয়েছেন, সেটি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে মনঃপূত হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে মনজুরুল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমি একটি চিঠি পেয়েছি। এ বিষয়ে আমি এখন কোনো কথা বলতে চাই না।”
মনজুরুল আহসান খান পাকিস্তান আমলে ৬০ এর দশক থেকে বাম রাজনীতিতে জড়িত। তিনি ১৯৯৯ সালে সিপিবির সভাপতি নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করেন টানা ১৩ বছর। ২০১২ সালে তিনি দলের উপদেষ্টা নির্বাচিত হন।
কী বলেছিলেন মনজুরুল?
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মনজুরুল আহসান সিপিবির বর্তমান নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সম্মেলন করার কথা বলেন।
তিনি পত্রিকাটিকে বলেন, “বর্তমান সিপিবির নেতৃত্বে রয়েছে একটা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। এরা অতীতেও কোনো আন্দোলন করেনি, বর্তমানেও করে না, এমনকি আমরা শ্রমিকদের নিয়ে যে সংগ্রাম পরিষদ করেছি, তাদের আন্দোলনেরও বিরোধিতা করে।”
তার বিরুদ্ধে সিপিবির অতীতের ব্যবস্থা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের সাবেক সভাপতি বলেন, “আমাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পাঁচ দফা অভিযোগ তুলে আমাকে শোকজ করেছে। যদিও শোকজ তিন মাস ধরে করেছে, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পায়নি, কেননা পার্টির অধিকাংশ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এটার বিরোধিতা করবে।
“আমাকে মোট পাঁচবার পার্টি থেকে সাসপেন্ড করেছে। এখন আরেকবার করতে চাচ্ছে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। আমরা সম্মেলন করে বর্তমান নেতৃত্বকে সরিয়ে দেব।”
মনজুরুলের বিরুদ্ধে আগের ব্যবস্থা
২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি আরেক আদেশে মনজুরুলকে ছয় মাসের জন্য দলের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত জানায় সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটি।
সেবারও বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধের কারণে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেটি মনজুরুল নিজেই লিখেছিলেন।
২০২০ সালের গত ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত সেই নিবন্ধে সিপিবি নেতা লেখেন, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যমুনা সেতু ও পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। দেশ ক্রমেই উন্নত দেশের পর্যায়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক শোষণমুক্ত বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর মানচিত্রে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।”
এর জেরে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে পদ ফিরে পেলেও মনজুরুল ছিলেন নিষ্ক্রিয়। গণমাধ্যমে তার বক্তব্য বা কর্মকাণ্ডের বিষয়টি সেভাবে আসেওনি।
২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ হয় মনজুরুলের ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবন নিয়ে লেখা ‘বলা ও না বলা কথা’ ।
সেই বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ১০ ফেব্রুয়ারি সিবিপির নেতা জানান, তার পাণ্ডুলিপি থেকে অনেক তথ্য বাদ দিয়ে বইটি প্রকাশ হয়। সেদিন বলেন, “সেখানে অনেক গোপন তথ্য ছিল। কিন্তু প্রকাশকরা এটা প্রকাশ করতে রাজি হল না। আমার মেয়ে সুমনা রাজি না, আমার ছোট ভাই খায়রুলও রাজি না। কারণ, এগুলো অনেক স্পর্শকাতর বিষয়। সেটা প্রকাশকরা আমার আপত্তি সত্ত্বেও বাদ দিয়েছে।”