প্রধানমন্ত্রী আশা দিয়ে ভারতে যান, কিছু পূরণ হয় না: ফখরুল

জনগণের সমর্থন না থাকায় সরকার দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে না, দাবি বিএনপি মহাসচিবের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2022, 12:33 PM
Updated : 6 Sept 2022, 12:33 PM

সরকার ‘জনসমর্থনহীন’ বলেই ভারতের সঙ্গে অভিন্ন সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারছে না বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, “আমি গতকালও বলেছি, উনি (প্রধানমন্ত্রী) তো প্রত্যেকবার গেছেন। আমাদেরকে অনেক আশা দিয়ে গেছেন- এই তিস্তা চুক্তি সই হবে, ওমুক হবে, তমুক হবে- এখন পর্যন্ত কোনোটাই হয় নাই।

“আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, ১০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিল। সেটারও আপনার ৩০ শতাংশ মাত্র কাজ হয়েছে। আর কোনো কাজ হয়নি।”

শেখ হাসিনা ভারত সফরে থাকার মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের একথা বলেন ফখরুল।

ভারতের সঙ্গে সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের যে অভিন্ন সমস্যাগুলো আছে, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করা এবং অন্যান্য যে সমস্যাগুলো আছে, এই সমস্যাগুলোর সমাধান বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত করতে পারেনি।

“পারেনি কারণ যে, ওদের পেছনের জনগণের সমর্থন নেই- সেটাই হচ্ছে বড় কারণ। সেজন্য এখন পর্যন্ত সেই শক্তি নিয়ে এই সরকার কোনো কাজ করতে পারেনি।”

“জনগণ যদি এই সরকারকে সমর্থন দিতে, তাহলে প্রত্যেকটি কাজই ইতোমধ্যে হয়ে যেত,”- বলেন তিনি।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে জিয়ার কবরে ফুল দিতে যান ফখরুল। এস এম জিলানীকে সভাপতি এবং রাজীব আহসানকে সাধারণ সম্পাদক করে গত রোববার সংগঠনটির আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়।

ভারতে পৌঁছার পর বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে একজন প্রতিমন্ত্রী থাকার বিষয়টিতে এক সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। কারণ এখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আগের যে বক্তব্যগুলো এবং এই সরকারের বেশির ভাগ মন্ত্রীদের যে বক্তব্যগুলো সেই বক্তব্য তো খুব স্পষ্ট।

“ওরা যেভাবেই রিসিভ করুক, তারা যাবে এবং সেটা নিয়ে তাদের খুব একটা বড় রকমের সমস্যা থাকবে না।”

মিয়ানমার প্রসঙ্গে

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি যে, এই সরকার যেহেতু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়, যেহেতু জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তারা সরকারে আসে নাই, সুতরাং তাদের পক্ষে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের স্বার্থকে রক্ষা করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ।

“এটা আমরা লক্ষ্য করেছি মিয়ানমারের ক্ষেত্রে। এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে এই সরকার কোনো ব্রেক থ্রু করতে পারে নাই।”

বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আরও ভয়াবহ কাণ্ড হচ্ছে যে, মিয়ানমার বারবার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিনষ্ট করে তারা মর্টার মারছে, গোলা মারছে। কিন্তু সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে একটি প্রতিক্রিয়া ছাড়া কোনো কিছু করার সাধ্য তাদের নেই।”

গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে প্রত্যাশা

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণের যেটা মূল চাহিদা একটা গণতান্ত্রিক সরকার, একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন- সেই ব্যাপারে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের সরকারগুলো তাদের ভুমিকা পালন করবে।

“আমরা বরাবরই বলে এসেছি যে, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকামী মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে গণতন্ত্র ছিল। এই আওয়ামী লীগ সরকার সেই গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে এবং প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে এখানে গণতন্ত্রকে হত্যা, মানুষের অধিকারকে হত্যা করছে, তারা বিরোধী পক্ষকে হত্যা করছে।”

তিনি বলেন, “এই সরকারের সমর্থনে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আসবে এটা আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি যে, সমস্ত গণতান্ত্রিক জনগণের যে সংগ্রাম, মহান ঐতিহ্যবাহী যে সংগ্রাম গণতন্ত্রের পক্ষের যে সংগ্রাম, বিশ্ব তাকেই সমর্থন করবে।”

ইসিতে অনাস্থা

বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই কমিশন সম্পর্কে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। কারণ এই নির্বাচন কমিশনকে আমরা মানি না। আমরা বারবার বলে এসেছি যে, নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন হবে না।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “নির্বাচন করতে হলে এখানে একটা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হবে। নির্বাচনকালীন যদি নির্দলীয় সরকার না হয় তাহলে অতীতে যে সমস্ত নির্বাচন কমিশন কাজ করেছে তাদের যে হাল হয়েছে, এদের সেই একই হাল হবে।”

শ্রদ্ধা নিবদনের সময় বিএনপির আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সপু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আকরামুল হাসান; মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব; যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটির সহসভাপতি ইয়াছিন আলী, সংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান ও সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।