“অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে। একজনকে আমরা দিলাম, সে নট ইলেক্টেবল; সেই অবস্থায় একটা সমস্যা হয়ে যাবে। সেখানে অন্য কেউ বেরিয়ে আসতে পারে”, বলেন কাদের।
Published : 05 Dec 2023, 04:06 PM
নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকরা বেশি আসন চাইলেও সমন্বয় করে আসন ও প্রার্থী চূড়ান্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নির্বাচনে শরিকদের বেশি আসন দাবি করা কতটা যৌক্তিক- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “অযৌক্তিক বলে কিছু নেই। তারা দাবি করতেই পারে। তারা জোট করে, তারা দল করে, দলের কাছে তো তাদের মর্যাদার একটা ব্যাপার আছে। তারা বিভিন্ন দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা তো চাইতে পারে।
“কিন্তু এখানে অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে। একজনকে আমরা দিলাম, সে নট ইলেক্টেবল; সেই অবস্থায় একটা সমস্যা হয়ে যাবে। সেখানে অন্য কেউ বেরিয়ে আসতে পারে।”
ঢাকার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শরিকদের আসন বণ্টনের প্রশ্নে তিনি বলেন, “একদলকে ৪০টা দিয়ে দেওয়া যায়, দিলে কী হবে? আমরা খুব সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে কথা বলেছি। রাজনৈতিক আলোচনাটাই বেশি হয়েছে। বৈঠকে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে৷ প্রত্যেকে প্রত্যেকের ভিউজ, কী করণীয় এ নিয়ে আলোচনা করেছেন।”
সোমবার গণভবনে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয়। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের ১৪ দলের শরিকদেরকে কোন কোন আসনে ছাড় দেবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান সেতুমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “চৌদ্দ দলের সাথে আমাদের একটা সমঝোতা অবশ্যই হবে। এ ব্যাপারে আমু ভাই (আমির হোসেন আমু) আমাদের সমন্বয়ক। বিষয়টি আজকালের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে।”
২০০৮ সাল থেকেই ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে আসছে। গত নির্বাচনেও ১৪ দলের শরিকদেরকে ১৬টি আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ।
এবার দুটি আসন ছেড়ে ২৯৮ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে তারা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে যাবে, এ কথা নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে জানিয়েছে আগেই। একইভাবে ১৪ দলের শরিক দলগুলোও আলাদাভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে।
কোন কোন আসনে সমঝোতা হবে, তা ঠিক করতে সোমবার সন্ধ্যায় জোট শরিকদের নিয়ে গণভবনে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ওই বৈঠক আর শরিকদের প্রসঙ্গে কাদের বলেন, “১৪ দলের সভাপতির কথা তারা শুনতে আগ্রহী ছিলেন। অনেক জাতীয়, আন্তর্জাতিক, ভূ-রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও তাদের জানারও আগ্রহ ছিল। জোটের চেয়ারম্যান আমাদের প্রধানমন্ত্রী কী ভাবছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে বাইরের শক্তিরও খেলা আছে। নিশ্চয় এখানে প্রত্যেকেরই একটা স্বার্থ আছে।
“বাংলাদেশকে ঘিরে ভারত মহাসাগর, বঙ্গপোসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর এখানে এদের মধ্যেই একটা কঅর্ডিনেশন আছে৷ এ বিষয়গুলো তারা সময়ে সময়ে আলাপ আলোচনা করে ব্যালেন্সড একটা নীতি গ্রহণ করার বিষয়ে তারা ঐকমত্য পোষণ করেন। বাংলাদেশকে নিয়ে বাইরের স্বার্থের যে খেলা বহুদিন আগে থেকে আছে, এদেশে ’৭৫ ঘটে গেছে, ৩ নভেম্বর ঘটেছে। বারবার তো হামলা আসে।
“আমাদের মূল কথা হচ্ছে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং সে ব্যাপারে আমরা সবাই একমত,” বলেন তিনি।
কয়েক জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে সেতুমন্ত্রী বলেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এটা কি নতুন কোনো দৃষ্টান্ত? এটা তো প্রায় নির্বাচনেই হয়। তাতে কি ক্ষতি হবে? প্রার্থীদের যদি যৌক্তিকভাবে নির্বাচন কমিশন বাতিল করে, তাহলে আমরা কোনো অজুহাত, আপত্তি করতে যাব না। শূন্য এবার কোথাও থাকবে না।”
‘উই আর হ্যাপি’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ১৪ দল নেতারা সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “১৪ দলের নেতারা সন্তুষ্ট কিনা এ তথ্য নেওয়ার দায়িত্ব সাংবাদিকদের। আমাদের মধ্যে ঐক্যের কোনো ঘাটতি নেই। উই আর হ্যাপি।
নির্বাচনে দলের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, “এখানে সফট স্টাইল, ফ্রি স্টাইলের বিষয় না। এটা আমাদের ইলেকশন স্ট্র্যাটেজি। আমাদের চেয়ারম্যান ওপেনলি বলে দিয়েছেন। জোটের চেয়ারম্যান, আমাদের সভাপতি একাধিকবার বলে দিয়েছেন।”
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। আলোচনা চলছে৷ কথাবার্তা বলেই তো সমাধান করতে হবে।”
দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। ফলে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর একে অন্যকে বাধা দেওয়ার খবরও মিলছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাদের বলেন, “পার্টির লোক হোক, যেই হোক, কেউ বাধা দিতে পারবে না।
“স্বতন্ত্র তো স্বতন্ত্রের জায়গায় আছেন। আমি যদি এখন কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে চাপ দিয়ে সরে দাঁড়াতে বলি। তাহলে কি সেটা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হবে না?”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে। এই নির্বাচনের তফিসিলকে একতরফা বলে আসছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এক তরফা নির্বাচন যারা বলে, তারা একতরফা বাধা দিচ্ছে। এটা একতরফা নির্বাচন নয়। যারা এক তরফা বাধা দিচ্ছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন-