বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে তিনি বলেছেন, তার নতুন দল গড়ার যে কথা বাজারে আছে, তা ‘সঠিক নয়’।
Published : 08 Nov 2023, 11:27 AM
ভোটের আগে বিএনপির ‘এক দফা’র আন্দোলন চলার মধ্যেই রাজনীতি থেকে ‘শিগগিরই’ অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
বুধবার সকালে ঢাকার বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের ডেকে তিনি বলেছেন, তার নতুন দল গড়ার যে কথা বাজারে আছে, তা ‘সঠিক নয়’। বিএনপি থেকেই তিনি অবসরে যেতে চান।
“আমি ৩১ বছর বিএনপির রাজনীতি করছি, ৩১ বছর একটানাভাবে এই দলের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছি। এখন আমি অসুস্থ। আর আমার পক্ষে… আমি শিগগিরই বিদেশে যাব। আগামী নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করা হয়ত আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।”
অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “রাজনীতি করার সেই শারীরিক সামর্থ্য আমার নেই। শিগগিরই অবসর গ্রহণ করব। আমার এলাকাবাসীর (ভোলা) মতামত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরে যেতে চান। সেজন্য ভিসার আবেদন করবেন।
“শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয়। এখন আমার অগ্রাধিকার হল শারীরিক সুস্থতা লাভ করা, চিকিৎসা গ্রহণ করা। রাজনীতির প্রতি কোনো আগ্রহ আমার অবশিষ্ট নাই।”
বিএনপি সরকারের এক সময়ের পানিসম্পদমন্ত্রী হাফিজের ‘নতুন দল গঠন’ এবং ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা’ নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যেই এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হাফিজ। সেখানে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতি নিয়ে নিজের বিশ্লেষণ তিনি তুলে ধরেন।
নতুন দলের খবর ‘সঠিক নয়’
হাফিজ বলেন, “গতকাল মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে আমি অসুস্থ, চিকিৎসা নিচ্ছি, কমবাইন্ড মিলিটারি হসপিটালে নিয়েছি এরপর সিঙ্গাপুরে চিকিতসা নিয়েছি। আবারো অতি শিগগিরই সম্ভব চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাব।
“শারীরিক অবস্থার কারণে রাজনীতি প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। বিএনপির রাজনীতি থেকেও দূরে আছি। গতবছরের ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগে যে বিভাগীয় মহাসমাবেশ হয়েছে, সেখানে সর্বশেষ উপস্থিত ছিলাম। এখন রাজনীতি থেকে অনেক দূরে আমি অবস্থান করছি।”
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, “তথ্যমন্ত্রী যে বক্তব্য দিলেন, যে আমি একটি নতুন দল করতে যাচ্ছি, এটি সঠিক নয়। আমি এখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নই।”
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ বলেন, “বিএনপি যদি নির্বাচন করে, আমি বিএনপির হয়েই নির্বাচন করব। এছাড়া আমার অন্য কোনো বক্তব্য নেই। এখানো বিএনপিতে আছি…, বিএনপিতে থাকব বলে আশা করি।”
এর আগে মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হাফিজ বলেছিলেন, “জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার উচিত।”
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি-জামায়াত জোট। রাজপথে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
এরপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে ওই নির্বাচনে প্রথমে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি। পরে ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি নতুন জোট ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে তাতে অংশ নেয়। সে নির্বাচনে ভরাডুবির পর ‘আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার’ অভিযোগ আনে বিএনপি।
এবার ভোটের আগে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি রাজপথে আন্দোলনে রয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের মধ্যে তাদের সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন পর দেশে হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচি ফিরিয়ে এনেছে দলটি।
বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত: হাফিজ
খালেদা ও তারেকের প্রতি শ্রদ্ধা-কৃতজ্ঞতা
হাফিজ বলেন, “আমি শারীরিক কারণে শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেব। কিন্তু ৩১ বছর বিএনপি করেছি, এই দলেই আছি, এই দলে থাকার চেষ্টা করব, এই দলের থেকেই রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চাই।
“বেগম খালেদা জিয়া আমার নেত্রী। তার প্রতি শ্রদ্ধা রইল, তার মুক্তি কামনা করি। বিএনপির সকল ত্যাগী নেতা-কর্মীর প্রতি অভিনন্দন জানাই। তারা রাজপথে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু সশস্ত্র প্রতিরোধের সামনে নিরস্ত্র ব্যক্তি কতটুকু করতে পারে? তবু তাদের অনেকে জীবন দিয়ে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেছেন, তাদেরও ধন্যবাদ জানাই। জনাব তারেক রহমানের প্রতি সন্মান জানাই। বিএনপি… এই দলটি উত্তর উত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি।”
তিনি বলেন, “আমি দেশের শান্তি চাই। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা যুদ্ধে আহত হয়েছি। যশোর ক্যান্টনমেন্ট বিরাট ক্যান্টনমেন্ট। আমিই একমাত্র বিদ্রোহী ছিলাম। এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের নায়করা পাদপ্রদীপের নিচে অন্ধকারে চলে গেছে, তাদেরকে দেশের মানুষ জানতে পারেনি। গ্রামে-গঞ্জের নিরীহ মানুষ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল সাধারণ মানুষের যুদ্ধ।
“এই দেশ এইভাবে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হতে পারে না। শ্রীলঙ্কা খারাপ হয়ে তারা আবার সামলে নিয়েছে। আমরা সামলাতে পারব কিনা জানি না। যদি এদেশের অবস্থা আরো খারাপ হয়, এজন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দল, তারাই দায়ী থাকবে।”
‘আমরা অনেক ভুল করেছি’
বিএনপির বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক মন্ত্রী হাফিজ বলেন, “জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। অনেকগুলো ভুল আমরা করেছি। সেই ভুল ডিসকাস করার ফোরাম এটা না। প্রকাশ্যে এটা বলা উচিত না। কিন্তু আমারতো কোনো ফোরাম নাই। দলে কোনো অবস্থা নাই।
“গত ৮ বছর দলের কোনো কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি। নেতা নির্বাচন করার সুযোগ নাই, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজনীতি করার সুযোগ নাই, বক্তব্য রাখারও সুযোগ নাই। তিন বছর আগে আমি এই ছাদের ওপরে সাংবাদিক সম্মেলনে একটা কথা বলেছিলাম যে, আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। আমি মুখ ও বধির স্কুলের ছাত্র না। সুতরাং একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কিছু কিছু কথা বলতেই হয় জাতির স্বার্থে। আমার কাছে দেশ সবার উপরে।”
তিনি বলেন, “দলের সকল নেতৃবৃন্দের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া তিনি আমার নেত্রী, যতদিন বেঁচে থাকবে তিনি আমার নেত্রীই থাকবেন, সকল সন্মান তিনি পাবেন। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিনিও আমাদের নেতা, তাকে সন্মান করি। কিন্তু কিছু ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া দরকার।
“আমরা এমনই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বসবাস করি, আওয়ামী লীগেরটা জানি না, কখনো আওয়ামী লীগ করি নাই, বিএনপিতে সত্যি কথা বলার মত কোনো লোক, বিশেষ করে চেয়ারপারসনের সামনে সত্যি কথা বলার মত লোক আমার চোখে পড়ে নাই। অনেক আগে সাইফুর রহমান সাহেব বলতেন তিনি একজন ত্যাগী নেতা। তাকে দুই-চারবার সত্যি কথা বলতে দেখেছি। এছাড়া সবাই ইয়েস স্যার, রাইট স্যার ছাড়া আর কোনো কিছুই জানেন না; এটা হল বাস্তবতা।”
সাবেক এই মন্ত্রী মনে করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা ‘উচিত ছিল’।
“সে সময় আওয়ামী লীগ লেজে গোবরে ছিল, প্রধানমন্ত্রী আমাদের নেত্রীকে আহ্বান করেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় দেবার জন্যে। কখন তারা এরকম আহ্বান জানায়, যখন লেজেগোবরে অবস্থা, এখন কি জানায়? আমরা সেই অবস্থার ফয়দা নিতে পারিনি। তার পরে যে রাজপথ অনুসরণ করেছি, সেই যে রাজপথে গিয়েছি, এখানও রাজপথে আছি।”
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ বলেন, “আগামী যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, এই নির্বাচনে শারীরিক অবস্থার কারণে আমার পক্ষে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। তবে আমি মনে করি বিএনপির এই নির্বাচনে যাওয়া উচিত। বিএনপিতে অসংখ্য ত্যাগী নেতা-কর্মী রয়েছে, তারা প্রাণপণ চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তবতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।”
হাফিজ বলেন, “অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক ভুল বোঝাবুঝি আমার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া আমার নেত্রী। তিনি যতদিন সুস্থ ছিলেন আমার কোনো সমস্যা ছিলো না। আমার এই ধরনের কোনো প্রেস কনফারেন্সও করতে হয়নি। আমি কনফোর্টবলি আমার এলাকার (ভোলা-৩, লালমোহন-তমিজুদ্দিন) জনগণকে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছিলাম, ক্ষমতায় থাকি বা বিরোধী দলে থাকি। এই এলাকার ভোটাদের আমি কৃতজ্ঞ, তারা পরপর ছয়বার আমাকে জাতীয় সংসদে নির্বাচিত করেছে।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় ২০২০ সালে ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিল বিএনপি। সে প্রসঙ্গেও কথা বলেন হাফিজ।
“২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর আমার দলের উচ্চ পর্যায় থেকে কারণ দর্শাও নোটিস জারি করা হয়েছে। ১১টি অভিযোগ ছিল আমার বিরুদ্ধে। আমি সক্রিয় না, আমি দলে কোনো কাজ করি না, সংস্কারপন্থি, আমি নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম করি... এরকম ১১টি আজগুবি অভিযোগ ছিল। একটি ছিল যে, আমি জনাব শওকত মাহমুদের (বহিষ্কৃত) সাথে বিজয়নগর, তোপখানা রোড, হাই কোর্টের সামনে সরকারবিরোধী মিছিলে অংশগ্রহণ করেছি।
“আমরা বিরোধী দল সরকারবিরোধী মিছিলে অংশগ্রহণ করতেই পারি, কিন্তু আমি এসব মিছিলে কখনোই ছিলাম না। এটা আমি ডিজার্ভ করি না, যে কাজ করি নাই সেসব কাজে যদি আমাকে অভিযুক্ত করা হয়, এই ৩১ বছর বিএনপি করার পর, বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের একজন সৈনিক হিসেবে এটি আমার জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক।”
নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার
এই মুহূর্তে কেয়ারটেকার সরকারের ওপর জোর না দিয়ে বিএনপির এখন ‘বিকল্প সমাধান’ খোঁজা উচিত বলে মনে করেন হাফিজ।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থায়… জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এসব সরকারের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জড়িত, এসব পরাশক্তির কাছে বাংলাদেশ সরকার কিছুই না। সুতরাং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের মধ্যস্থতা পেলে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে।”
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় আপাতত জোর না দিতে বললেও হাফিজ মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হওয়ার ‘সুযোগ নেই’।
“এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হবে না, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের অধীনেও হবে না। সুতরাং নিরপেক্ষ সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারই আমাদের ভবিতব্য, যার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। আমি আশা করি সংঘাতের রাজনীতির অবসান হবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, “এদেশের একজন ক্ষুদ্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একটা অনুরোধ তার কাছে রাখতে চাই, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, দেশের অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। এখন অনুগ্রহ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক সম্প্রীতির কারণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
“আপনি আপনার মহান পিতার পথ অনুসরণ করে পদের তোয়াক্কা না করে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। তার আগে বিএনপির সাথে বা অন্য কোনো দল, যার সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে, তাদের সাথে বসে নির্বাচনের একটা পরিবেশ এনে দিন।”
হাফিজ বলেন, “বিএনপিকে অনুরোধ জানাই, কীভাবে সমঝোতার রাজনীতির মাধ্যমে আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন পেতে পারি। আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহকে অনুরোধ জানাব, আপনারা মধ্যস্থতা করুন।
“জাতিসংঘ অনেক দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে থাকে। আমরা জাতিসংঘের তদারকিতে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। নইলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।”
আক্ষেপ
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন ‘জেড’ ফোর্সে ছিলেন হাফিজ উদ্দিন। যুদ্ধে সাহসিকতার জন্যে তিনি বীর বিক্রম খেতাব পান।
সামরিক বাহিনী থেকে অবসরের পর রাজনীতিতে যুক্ত হন হাফিজ। ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে হাফিজকে পানিসম্পদমন্ত্রী করেন। এক যুগের বেশি সময় ধরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাকে কারাগারেও যেতে হয়েছে।
‘জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে’ ১৯৯২ সালে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার কথা তুলে ধরে হাফিজ উদ্দিন বলেন, “গত ২৩ বছর ধরে আমি এই দলের ভাইস চেয়ারম্যান। স্থায়ী কমিটিতে যত সদস্য আছেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ছাড়া বাকি সবাই আমার নিচের পদে ছিলেন, আমি যখন ১৯৯২ সালে ভাইস চেয়ারম্যান।
“একে একে তারা সবাই আমাকে অতিক্রম করে আমার উপরে চলে গেছেন। এতে আমার কোনো অসুবিধা নাই। পদবীর জন্য তো রাজনীতি করি না। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে আমি নানা ধরনের অসুবিধা সম্মুখিন হচ্ছি।”
‘বিএনপির সংস্কার করুন’
হাফিজ বলেন, “আমি আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমানকে আহ্বান জানাব, দলে সংস্কার করুন। এখন যেভাবে চলে সেভাবে কোনো রাজনৈতিক দল চলতে পারে না। রাজনৈতিক দলের কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটি করবে, কেন্দ্রীয় কমিটি জেলা কমিটি করবে, জেলা কমিটি উপজেলা কমিটি করবে, উপজেলা কমিটি ইউনিয়ন কমিটি করবে, ইউনিয়ন কমিটি ওয়ার্ড কমিটি করবে– সারা পৃথিবীতে এরকম সিষ্টেম।”
এরকম ব্যবস্থা জিয়ার সময়ে ছিল দাবি করে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “আমরা কেন সেই পথ থেকে বিচ্যুত হলাম, কেন দলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হল, কেন কমিটি বাণিজ্য হচ্ছে, কেন ত্যাগী নেতারা নির্বাসিত, খুলনার নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সিলেটের আরিফুল হক চৌধুরী, বরিশালের মজিবুর রহমান সরওয়ার, এরা তো ত্যাগী নেতা। ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। আমি জনাব তারেক রহমানকে বলব, এই দলে সবাই আপনার অনুসারী, আপনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র।”
‘পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনুন’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান রেখে হাফিজ বলেন, “এখন এই যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে…. আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, সামনে আমাদের কঠিন দিন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে তলানিতে যাচ্ছে। যারা এই বেগমপাড়া বানিয়েছে, বিদেশে টাকা পাচার করেছে, অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য ক্ষমতাসীন দল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমলাদের সংখ্যাই নাকি বেশি বেগমপাড়ায়। এখন তাদেরকেও ফিরিয়ে আনেন, অন্তুতপক্ষে তাদের যে অর্থকড়ি তা ফিরিয়ে আনেন।”
চিঠি দিলে বিদেশি সরকারগুলো ওই অর্থ ফেরত পাঠাবে- এমন আশা প্রকাশ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “সুইস ব্যাংকে যাদের টাকা, বাংলাদেশ সরকার তো কোনোদিন জানতেও চায়নি, কে কে এখানে টাকা রেখেছে। দেখা যাবে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের, ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ অনেক টাকা রেখেছে। এগুলো ঠিক করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাই।”