“একতরফা নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে, বিপর্যস্ত করবে,” বলেন তিনি।
Published : 07 Dec 2023, 07:54 PM
দল থেকে ভাগাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পর রিমান্ড- জার্মানির কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের অত্যাচারের কাহিনীকেও হার মানায়। রিমান্ডে নিয়ে যেভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে… দল পরিবর্তনের জন্য কারা অন্তরীণ গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদদের চরম অসন্মানজনকভাবে তাদের সম্মতি আদায়ের জন্য জুলুম করা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।
“রিমান্ডে নির্যাতন করে কোনো নেতাকর্মীর মিথ্যা সাক্ষ্য আদায়ের চেষ্টা চলছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের নিপীড়ন-নির্যাতন, হেনস্তা ও হেয় করেও এদের তটস্থ করতে না পেরে উৎপীড়নের পথ অবলম্বন করেছে এই অবৈধ সরকার।”
রিজভী বলেন, “সরকার আইন প্রয়োগকারী র্যাব-পুলিশ ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলের নীতি-নৈতিকতার অধঃপতনের দিকে ঠেলে এক সুগভীর নীল-নকশা চালিয়ে যাচ্ছে… ‘হয় আমাদের কথা শোনো, আর তা না হলে তোমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে দেব- এমন অত্যাচার করা হবে, তোমরা যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন পঙ্গু হয়ে অথবা তোমরা জীবন্ত লাশ হয়ে থাকবে’… এরকম অত্যাচার করা হচ্ছে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উপরে। ”
এসব করে কোনো লাভ হবে না মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “এই উৎপীড়নের পথ, নিপীড়নের পথ, নির্যাতনের পথ অবলম্বন করে অথবা লোভ-প্রলোভন দেখিয়ে তিনি (শেখ হাসিনা) তার অবৈধ ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করবেন, সম্প্রসারিত করবেন- এই সুযোগ এবার তার হবে না। সকল সুযোগ তার বন্ধ হয়ে গেছে।
“দেশের মানুষকে প্রতারিত করে তিনি ক্ষমতায় থাকবেন, এটা আর সম্ভব নয়।”
‘পোশাকশিল্প ধবংসের চক্রান্ত চলছে’
রিজভী বলেন, “পোশাক খাতে আতংকের বিষয়টি মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে। ইতোমধ্যে এ খাত ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ব্যবসা হারিয়েছে। পোশাক শিল্পের মালিকদের ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে উদ্ভট পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বালখিল্য প্রদর্শন করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বললেই পোশাক রপ্তানি বন্ধ হবে না, নিষেধাজ্ঞা দিলে কিছুই হবে না’। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরাও দিব’।
“এমন পরিস্থিতির মধ্যে লক্ষ লক্ষ গরিবের রুটি রুজির একমাত্র কর্মক্ষেত্র গার্মেন্টস শিল্পের ধ্বংস ডেকে আনছে গণবিচ্ছিন্ন নিশিরাতের সরকার। কারণ দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৮২ শতাংশ যায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয়। এসব দেশে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। ”
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “জনগণ বিশ্বাস করে, রেডিমেইড গার্মেন্টস ব্যবসা এখন অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধ ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি চায় অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; বাংলাদেশের বাজারকে হুমকির মুখে ফেলছে। সুতরাং আগামী একতরফা নির্বাচন শুধু শেখ হাসিনার ক্ষমতার নবায়ন নয়, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার লাইসেন্স।”
রিজভী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষকে শেখ হাসিনা গং বোকা ভাবেন, বিদেশিদেরকেও তারা বোকা ভাবতে শুরু করেছেন। তারা ভেবেছে এভাবে সবার চোখে ধুলো দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের সকল মানুষ জানে, এমনকি যারা আওয়ামী লীগ করে তারাও জানে যে এই সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে সর্বোচ্চ প্রতারণা করছে। বাংলাদেশের সকল মানুষকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাজপথে নামতে হবে।
“আমরা বারবার বলেছি, একতরফা নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে, বিপর্যস্ত করবে। দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। এই পাতানো নির্বাচন কেবল বয়কট নয়, গণপ্রতিরোধের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে একটা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা নিশ্চিত করতে হবে।”
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৪১৫ জনের বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এ সময়ে ১৯ মামলায় ২ হাজার ৪৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।