বিএনপি নেতা রিজভী বলছেন, রুশ রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ‘অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত ও আওয়ামীসুলভ’।
Published : 02 Feb 2024, 11:47 AM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার মনতিৎস্কির বক্তব্যকে ‘অনাকাঙ্খিত’ বলছে বিএনপি।
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন, রুশ দূতের বক্তব্য ‘বাংলাদেশের জনগণের অনুভূতিতে’ আঘাত করেছে।
শুক্রবার দলীয় প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে রিজভী বলেন, “ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর-মিথ্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বলে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সরকারকে নির্বাচিত করেছে এবং ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে, যাদের অধিকাংশ ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে।
“আমরা বলতে চাই, তার(রাষ্ট্রদূত) এই অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত ও আওয়ামীসুলভ বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বলয়ের বাইরের সকল বাংলাদেশি নাগরিক আজ, নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনতা হারিয়ে, নিজ দেশে পরাধীন। গত ১৫ বছর ধরে গণবিদ্বেষী সরকার যে দুর্নীতি-দুঃশাসন ও দমন-দুর্বৃত্তায়ন চালিয়েছে, সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও পেশার মানুষ তাতে বৈষম্য, অবিচার ও নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের আকাঙ্খা অভিন্ন ও এক সূত্রে গাঁথা। সেই অভিন্ন লক্ষ্য হল… একটি নির্বাচিত ও জবাবদিহিতামূলক সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রত্যাশা, সুতীব্র এই গণআকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে রাশিয়া, ভারত, চীন, বা অন্য কোনো রাষ্ট্র, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের গণবিরোধী অপশাসনকে অযাচিত সমর্থন করবে না।”
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “বিএনপি বিশ্বাস করে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনেই দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক সাফল্য নিহিত। তাই বিএনপি রাশিয়াকে আহ্বান করছে, বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, তথা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতার সংকল্প ও মহান আত্মত্যাগের প্রতি উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনের জন্য।”
বিএনপির বর্জনের মধ্যে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচন নিয়ে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের একাংশ সন্তোষ প্রকাশ করলেও ভোট ‘সুষ্ঠু হয়নি’ বলে বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে চীন, ভারত ও রাশিয়া নির্বাচনের ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে; নতুন সরকার গঠনে আওয়ামী লীগের প্রশংসা করেছে।
নির্বাচন না গিয়ে আন্দোলনে থাকা বিরোধী দল বিএনপি নতুন সংসদের বিরুদ্ধে কালো পতাকা মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
এর মধ্যে শনিবার দলের একটি কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আজকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, এই দেশ আমাদের, এই দেশের সমস্যা আমাদের, এই দেশের সমস্যা সমাধান আমরাই করব। সে কারণে আজকে ভারত, চীন আর রাশিয়া তাদের সরকার হাসিনার সরকার, এটা বাংলাদেশের জনগণের সরকার না।”
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএনপির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার মনতিৎস্কি।
বিএনপির অভিযোগ ‘বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা’: রুশ রাষ্ট্রদূত
তিনি বলেন, “রাশিয়া কী করেছে? আমরা কোনো দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না, বিশেষ করে বাংলাদেশের মত বন্ধুদেশে। এটা এক ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য বা মিথ্যা তথ্য। এগুলো বিশ্বাস করবেন না।”
এর জবাবে বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, “এটি স্পষ্ট প্রমাণিত যে, ৭ জানুয়ারি যে প্রহসনমূলক ডামি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা বা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানো তার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং নির্বাচনের নামে এটি ছিল জাতির সঙ্গে একটি সহিংস প্রতারণা, যার উদ্দেশ্য নিশিরাতের ভোটে অবৈধভাবে, অনৈতিকভাবে ও অসাংবিধানিকভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের স্বার্থবাদী, কর্তৃত্ববাদী অনুগত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের সহায়তা ও সমর্থনে কুক্ষিগত ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধি করা।”
দলটির অভিযোগ, “যে ভোট পড়েছে বলে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন, তার বিপরীতে, সারা দেশের ভোটকেন্দ্রগুলো থেকে প্রাপ্ত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও, তথা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সত্যিকার অর্থে শতকরা ৫ ভাগেরও কম ভোটার ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন। ভাগ—বাটোয়ারার এই কারসাজির নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল জনগণ প্রমাণ করেছে, বিএনপি ও ৬২টি গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক, তথা গণআকাঙ্খার প্রতিফলন।”
নির্বাচন ‘সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি’ বলে বিভিন্ন দেশ এবং সাতটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিক্রিয়া বিবৃতিতে তুলে ধরা হয় ।
সেখানে বলা হয়, “শীর্ষ নেতৃত্বসহ প্রায় ২৫ হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তারের তথাকথিত এই নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার পর, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার হতাশা পোষণ করেছেন। সকল বাংলাদেশির ভবিষ্যত হুমকির মুখে মন্তব্য করে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বর্তমান গতিপথ পরিবর্তন করে, একটি সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির।
বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে কাজ চলছে: হাছান
“একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশেষত সব বড় রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায়। সকল নির্বাচনি অনিয়মের সময়োপযোগী ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বানও জানায় তারা।”
বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়. বস্তুত, ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হওয়ায় একটি নতুন ও অর্থবহ নির্বাচন আয়োজন আজ বাংলাদেশের জনগণের গণদাবি। সেই সর্বজনীন লক্ষ্য অর্জনে, গণতন্ত্রের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে, যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে, জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করে আসছে বিএনপি।
“নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার তথা নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে চলমান এই শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনে প্রেরণা জোগাচ্ছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন।”