“একটা পাড়া থেকে একটা গহীন জঙ্গলের কথা বলে নিরীহ সাধারণ মানুষজনকে জঙ্গি বলে তুলে নিয়ে আসল।… তারা দেখাতে চায় যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আছে।”
Published : 22 Aug 2023, 03:51 PM
দেশে কোনো জঙ্গি নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, ধার্মিকদেরকে সরকার জঙ্গি বানিয়ে `রাজনৈতিক ফায়দা’ হাসিল করছে।
পশ্চিমা বিশ্ব ও ভারতকে দেখাতেই ‘জঙ্গি নাটক’ সাজানো হচ্ছে অভিযোগ করে বিরোধী দলটির নেতা আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারকেই ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটউশন মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির একাংশের প্রতিষ্ঠাতা কাজী জাফর আহমেদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
এরশাদ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির ভগ্নাংশটি কিছুদিন আগেও বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল। ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেওয়ার পর যুগপৎ আন্দোলনে আছে দলটি।
বিএনপি নেতা বলেন, “এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। এটা পাপ নয়, অপরাধ নয়। কিন্তু কোনো মানুষ যারা ধর্ম পালন করেন, তাদেরকে জঙ্গি বানিয়ে সে (সরকার) ফয়দা হাসিল করে।”
সম্প্রতি কুলাউড়ার পাহাড়ি এলাকায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তায় অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করে।
এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে আছেন চিকিৎসকের স্ত্রী, প্রকৌশলী। কয়েকজন বিদেশে পড়াশোনা করে সরাসরি এখানে চলে এসেছেন।
আলোচিত সেই অভিযানের পরেই একে ‘নাটক’ বলেছিলেন মির্জা ফখরুল। আবার একই কথা বললেন তিনি।
বিএনপি নেতা বলেন, “আপনারা দেখেছেন কিছুদিন আগে.. একটা পাড়া থেকে একটা গহীন জঙ্গলের কথা বলে নিরীহ সাধারণ মানুষজনকে জঙ্গি বলে তুলে নিয়ে আসল।
“এটার প্রয়োজন আছে তাদের। কারণ, তারা দেখাতে চায় যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আছে। জঙ্গি আছে, এটাকে দমন করবার জন্য শুধু তাদেরকেই দরকার। এটাই হচ্ছে তাদের মূল উদ্দেশ্যে। এবং সেটা দেখাতে চায় পশ্চিমা বিশ্বকে, ভারতকে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা তো জানি যে জঙ্গি আওয়ামী লীগ, জঙ্গি এই সরকার। তারা সাধারণ মানুষের ওপরে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চাপিয়ে দিয়ে হত্যা করছে, ধবংস করছে, তাদের সব অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে।”
ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গেও কথা বলেন ফখরুল। বলেন, “পত্রিকায় দেখেছেন, তিনটা অস্ত্র। সেই অস্ত্রগুলো দেখে মনে হবে যে, ২০/২৫ বছর আগে মাটিতে লুকানো ছিল, সেই অস্ত্র তুলে নিয়ে আসছে। এই মিথ্যা প্রচারণা, মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করতে।
“ওরা সমস্ত দেশের মানুষকে বোকা মনে করে। এখন সবাই বুঝে… এভাবে প্রতারণা করে সে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।”
২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ‘জবাব’
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য রেখেছেন, তার প্রতিক্রিয়া জানান ফখরুল।
শেখ হাসিনার অভিযোগ, এই ঘটনা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মদদে হয়েছে। তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হয়েছে বিচারিক আদালতের মামলায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তিনি (প্রধানমন্ত্রী) শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরিবারকে বলেছেন খুনি। আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “ওই মামলার তিন তিনটা চার্জশিটে তার (তারেক রহমান) নাম কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনো সাক্ষী প্রমাণ দেখাতে পারেনি। চতুর্থ যে চার্জশিট তৈরি করা হলো আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে সেখানে, সেখানে তার নাম যুক্ত করা হল।
“মুফতি হান্নানকে গ্রেপ্তার করেছে বিএনপি সরকার। তাকে ১৪৫দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে তাকে দিয়ে ফলস এফিডিভেড করিয়ে তারেক রহমানের নাম যুক্ত করা হয়। পরে মুফতি হান্নান তার এফিডেভিড প্রত্যাহার করেছিলেন। সেই এফিডেভিড আদালত হাজির করা হয়নি। আদালতে যাওয়ার আগেই তাকে আরেক মামলায় ফাঁসির হুকুম হয়েছিল। সেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
“ভয়াবহ একটা ঘটনা ঘটেছে, একটা নিকৃষ্টতম, কলঙ্কজনক ঘটনা, এতগুলো মানুষের প্রাণ গেছে সেই মামলায় প্রধান আসামিকে (মুফতি হান্নান) আদালতে হাজির করার আগেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হল।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মামলায় সাক্ষ দিতে না যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন রাখেন বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, “আমরা অবশ্যই এই ধরনের ঘটনাকে শুধু নিন্দা নয়, ঘৃণা প্রকাশ করি। আমরা কখনো কোনো সন্ত্রাসকে পছন্দ করি না। এটা কলঙ্কজনক ঘটনা, ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এটা যেকোনো জাতির জন্য কলঙ্কময়। কিন্তু তারা বার বার এই মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এটা করে কোনো লাভ হবে না।”
‘এই সরকারের অধীনে আর নির্বাচন নয়’
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান পুনরুল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। তাহলেই শুধুমাত্র একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে।”
কাজী জাফর চলে গেছেন, তার দলের নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার অসুস্থ উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, “এখানে যারা বয়স্ক মানুষ আছি আমিসহ, আমাদের সময় প্রায় শেষ হয়ে আসছে। আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করছি। সেই লড়াইটা কিন্তু ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থে নয়। সেই লড়াইটা হচ্ছে মানুষের জন্য, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য লড়াই।
“কাজী জাফর আহমদ, মোস্তফা জামাল হায়দার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন, স্বাধীন ভূখণ্ড নিয়ে এসেছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন আমাদের জহিরউদ্দিন স্বপনেরা, তাদের জেনারেশনরা।
“আজকের তরুণদের এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে গণতন্ত্র ফিরে নিয়ে আসার মহান দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটা আমার বিশেষ আবেদন। প্রত্যেকটা সময়-যুগে একেক সময় আসে যখন এই কথাটা বলতে হয়, কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাকিছে ভবিষ্যত।”
জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমের সঞ্চালনায় আলোচনায় কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় পার্টির আরেক অংশের মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, ভাইস চেয়ারম্যান কাজী নাহিদ, কাজী জাফর আহমেদের বড় মেয়ে কাজী জয়াও বক্তব্য রাখেন।