Published : 04 Aug 2023, 09:06 PM
চলমান সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবি তুলেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
তিনি বলেছেন, “নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদেরকে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।”
শুক্রবার বিকেলে পুরানা পল্টন মোড়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে শক্তিশালী ইলেকশন কমিশন দিয়ে হবে না। কারণ নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন সরকারকে খুশি রাখার জন্য সব সময় চেষ্টা করে। সে কারণে আমরা বলছি, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুযোগ এখন আমাদের দেশে নাই। সংস্কৃতি বদলে গেছে।
“এখন যে পার্লামেন্ট আছে, সেটা বাতিল না করেই যদি ইলেকশন দেওয়া হয়, তাহলে পার্লামেন্ট মেম্বাররা একটু বিশেষ সুবিধা পায়। তাদের পেছনে পুলিশ থাকে, গার্ড থাকে। আমরা বলেছি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে তারপর ইলেকশন করো। এই দাবি না মানলে এই সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না।”
তিনি বলেন, “এই সরকার আমাদের ভাতের অধিকারই কেড়ে নেয়নি, ভোটের অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, পাবলিক তাদের (ক্ষমতাসীনদের) ভোট দেবে না। সরকারের পায়ের তলায় মাটি নাই। সরকারের জনসমর্থন নাই। ভোট হলে এক ডজনের বেশি এমপি জিততে পারবে কিনা সন্দেহ। ভুয়া ভোট ছাড়া তাদের ক্ষমতায় থাকার উপায় নাই।”
রাজনীতিতে স্থিতিশীলতার নামে দেশে ক্ষমতার স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মন্তব্য করে কমিউনিস্ট পার্টির এই নেতা বলেন, “সেজন্য তারা ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। জেল-জুলুম, নির্যাতন অত্যাচার, ডিজিটাল আইনে বেপরোয়া গ্রেফতার ও নিপীড়নের মাধ্যমে দেশে একটা ফ্যাসিস্ট পদ্ধতির শাসন কার্যক্রম পরিচালন করছে। এতদিন যে চুরি ডাকাতি করেছে, অপরাধ করেছে সব কিছুর বিচার হবে।”
সিপিবির সভাপতি শাহ আলম বলেন, “দেশের রাজনীতি এখন অগ্নিগর্ভা।দেশের অর্থনীতি ভারসাম্যহীন। মানুষের মাঝে উদ্বগ- উৎকণ্ঠা। হামলা, মামলা ও নির্যাতন ও ভয়ের রাজনীতি ছড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। মিছিল-মিটিং ও বাক স্বাধীনতার অধিকার নাই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নাই।
“আজকে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। অথচ এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন ধর্মঘট, হরতাল ও অবরোধ করেছে। তখন সংবিধানের দোহাই দিলেন না কেন? গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট এসেছে। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে।”
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে এখনি আলোচনা শুরু করুন। এটা না করে পরস্পর ভাগাভাগি করে যদি বাংলাদেশে নির্বাচন হয় অথবা পুনরায় এক তরফা নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়, কমিউনিস্ট পার্টি এই প্রহসনের নির্বাচন রুখে দাঁড়াবে। ”
এ সমাবেশ থেকে রুহিন হোসেন প্রিন্স নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আগামী ১১ অগাস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
অন্যদের মধ্যে সিপিবির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি শামসুজ্জামান হীরা এবং সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার সমাবেশে বক্তব্য দেন।