বিএনপি-জামায়াতের ‘নির্যাতন’: মানববন্ধনে তিন প্রজন্মের পরিবার

“শুধু একক ঘটনা তুলে ধরার মধ্য দিয়ে আপনারা মানবাধিকারের অবক্ষয় করছেন," বলেন তারানা হালিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2023, 04:19 PM
Updated : 13 Feb 2023, 04:19 PM

পঁচাত্তর পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের সময়ে খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়া তিন প্রজন্মের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন করেছেন।

সোমবার ঢাকার শাহবাগে এ মানববন্ধনে যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তারানা হালিম।

মানববন্ধনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা বলেন, "বিএনপি-জামায়াত ও তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীরা বলার চেষ্টা করছে, বর্তমান সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বেশি ঘটনা ঘটেছে। তারা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ ইতিহাসকে উপেক্ষা করছে। তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গল্পের অপর দিকটাও শুনতে রাজি নন।

"যেখানে ৩০ লক্ষ বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং চার লক্ষাধিক নারীকে অসম্মান করা হয়েছিল। জাতিসংঘ এখনও ১৯৭১ সালের নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৭৫ সালের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইন্ডেমনিটি দিয়ে খুনিদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। আমরা আমাদের নির্যাতিত মানুষদের কথা বলছি। আন্তর্জাতিক মানবধাধিকার সংগঠন, আন্তর্জাতিক জোট ও বিএনপি-জামাতকে বলব সেসব ইতিহাস স্মরণ করুণ। আপনারা সেইসব ইতিহাস শুনুন। শুধু একক ঘটনা তুলে ধরার মধ্য দিয়ে আপনারা মানবাধিকারের অবক্ষয় করছেন।"

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য হিসেবে উপস্থিত জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের পুত্র ও রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যাকাণ্ডের মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আবারও আঘাত হানা হয়। বাংলাদেশের অস্তিত্বে যারা আঘাত করতে চেয়েছিল যারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল সেই জিয়াউর রহমানের নির্দেশে জেলখানাতে রাত্রিবেলাতে সকল সভ্য দেশের আইন উপেক্ষা করে একটি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। সেই হত্যাকাণ্ডে জাতির চারজন শ্রেষ্ঠ সন্তান চার জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরে বিমান বাহিনীর অনেক কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তাকে হত্যা করা।

“এতগুলো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো, জিয়াউর রহমান পেছন থেকে তার লোকজনের মাধ্যমে, তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল।"

বাবাকে হত্যার পর নিজ পরিবারের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে লিটন বলেন, "আমার ছোট্ট বোনটি ১৯৭৫ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সী ছিল। সে কিচ্ছু বুঝতো না। আমার পিতার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান। সে আমার পিতাকে হারিয়ে একেবারে কিছুদিন স্তব্ধ হয়ে যায়। সে শুধু তাকিয়ে খুঁজতো তার বাবা কোথায়। কেন তার বাবা আসছে না। সে তো অত বুঝতো না।

“তখন তো মানবাধিকার নিয়ে যারা কথা বলেন তাদের কোথাও দেখিনি। পরবর্তীতে জাতির পিতার দুই কন্যা যখন দেশের বাইরে, অনেকটা দুঃখ নিয়ে কষ্ট নিয়ে অনেক সমস্যা নিয়ে তারা বসবাস করছিলেন সেইসময়ও মানবাধিকারের কথা উঠে নাই।”

বর্তমানে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলছেন তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “যারা গলা ফাঁটিয়ে দিচ্ছেন সারা পৃথিবীতে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে বিএনপি ও জামাতের কিছু হলেই যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা খুঁজে পান। সেই তথাকথিত সুশীল সমাজকে আমি প্রশ্ন করতে চাই, নিশ্চয়ই মানবাধিকার এমন একটি বিষয় যেটি আপনাদের মুখে অন্তত শোভা পায় না।"

মানববন্ধনে বীরাঙ্গনা ফাতেমা আলী মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, "আমার বাবার বাড়ি ঠাঁই পাইনি, স্বামীর বাড়ি ঠাঁই পাইনি। তখন বীর বিক্রম হেমায়ত বাহিনীর সঙ্গে যখন ঢাকা আসি, ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের বাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমার সঙ্গে বহু মেয়েকে একসঙ্গে এক কাতারে বিয়ে দিয়েছিলেন।

"বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার পিতা হিসেবে। আমি আমার সেই সমস্ত বোনদের আজও বলি এখন কেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার ওপর হামলা হবে? কেন আমাদের বাংলাদেশে আনাচে কানাচে হামলাকারীরা হামলা চালায় যাচ্ছে?"

২০১৩ সালে বিএনপির ‘অগ্নি সন্ত্রাসের শিকার’ হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যাওয়া এক নারী ভুক্তভোগী তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন এ সমাবেশে।

তিনি বলেন, "জজ কোর্টে আইনজীবী ছিলাম। সেদিন বাসে উঠলাম যাত্রী হয়ে। বাসটি শাহবাগ আসতেই বিএনপি-জামায়াতের ছোড়া বোমায় বাসটিতে আগুন লেগে যায়। সবাই চিৎকার করছিল। আমি নেমে যাই। সেখানে ৬ জন মারা যায়।

“শশ্মানের চিতার আগুন সড়কে দেখলাম। ১৩ সালে সেই ঘটনায় মানবাধিকার প্রশ্নে কেউ আমাদের কাছে আসেনি। শুধু জননেত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন। আমাদের চিকিৎসা দিয়েছেন। বিদেশি যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তাদের প্রতি ধিক্কার আসে।"

সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৭১, ১৯৭৫ ও ৭৭-৭৮ সালে হত্যার শিকার হওয়া ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা সংহতি প্রকাশ করে।