র্যাব-পুলিশের সঙ্গে অস্ত্র হাতে কারা দিনের পর দিন লড়াই করতে পারে, সেটি দেশবাসীকে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
Published : 24 Jul 2024, 12:51 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনকে ব্যবহার করে ‘একটি বড় ধরনের চক্রান্ত’ হয়েছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের ধারণা, দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এই চক্রান্ত করা হয়েছে।
একের পর এর সরকারি সম্পত্তিতে হামলা, কারাগার ভেঙে জঙ্গি সংগঠনের কর্মীদের মুক্ত করে অস্ত্র লুট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি বন্দুকযু্দ্ধের ঘটনাই এর প্রমাণ বলে মনে করেন তারা। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা গোষ্ঠীর যোগসাজসে এসব ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকায় যাত্রাবাড়ী, বনশ্রী, রামপুরা, বাড্ডায় বিভিন্ন বাসা বাড়ির ছাদে অস্ত্র হাতে অবস্থান নিয়ে গুলি করা হয়েছে বলেও জানাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার সবসময়ই কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল ছিল। যার কারণে তাদের দাবি পূরণে সরকারের আইনজীবীরা লড়েছে এবং ছাত্রদের দাবি পূরণ হয়েছে।
“আর যারা সারা দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে, তারা দুর্বৃত্ত। রাজনৈতিক ফয়দা লোটার জন্য বিএনপি জামায়াত সশস্ত্র ক্যাডারদের নামিয়ে এই অরাজকতা করেছে, সরকার কঠোর হস্তে তাদের দমন করবে।”
২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকারি পরিপত্র জুনের শেষে অবৈধ ঘোষণা হয় হাই কোর্টে। এরপর আবার আন্দোলন শুরু হলে সরকারের পক্ষ থেকে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়ে সরকারি দলের নেতারা বলছেন, কোনো বিষয় আদালতে থাকলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই।
হাই কোর্টের যে রায়কে ঘিরে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছিল, সেই আদেশ আপিল বিভাগ বিভাগে স্থগিত ছিল, ফলে চক্রান্ত না থাকলে সেই বিষয়টি তখনই থেমে যাওয়া উচিত ছিল বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
বনশ্রীতে একটি স্কুলের ভবন দখল করে নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে নেতারা জানান, তারা সবাই ছিলেন সশস্ত্র এবং পাশের ভবনের বাসিন্দাদের আলো জ্বালাতেও নিষেধ করা হয়েছিল।
রামপুরায় বিটিভি ভবন, মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরনো ভবন, সেতু ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনে আগুন দিয়ে কয়েকশ গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকেও বাধা দেওয়া হয়েছে। এসব কারা করতে পারে, তা তো আমরা এর আগেও দেখেছি।
“এটা পরিষ্কার, সারা দেশে যে ধংসযজ্ঞ করা হয়েছে এটা সুস্থ স্বাভাবিক কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর না। তাদের মূল লক্ষ্যই হল, সরকার পতন। তাদের দীর্ঘ দিনের পরিকল্পিত রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত এটা। এরা সাধারণ ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে এই ধংসলীলা চালিয়েছে।”
নরসিংদীতে কারাগারে হামলা করে ৮৫টি চায়নিজ রাইফেল লুট, জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ৯ জনকে মুক্ত করে নিয়ে যাওয়া, যারা পালাতে চায়নি, তাদেরকে মারধর করার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “কোটার বিষয়টা আপিভ বিভাগে ছিল, ৭ আগস্ট রায় হওয়ার কথা ছিল, সরকার পক্ষে আইনজীবীরা সেটাকে ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে এগিয়ে নিয়ে এসেছে।
“তাদের প্রশিক্ষিত বাহিনী নামিয়ে সারা দেশে যে নৈরাজ্য করেছে, প্রাণহানী ঘটিয়েছে এটা সুপরিকল্পিত। পুলিশ, র্যাব, বিজিবির মত বাহিনীর সঙ্গে কারা লড়াই করতে পারে? যাদের নিঃসন্দেহে অস্ত্র চালনা ও সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল।“
২০১৩ সালেও এভাবে সশস্ত্র ব্যক্তিরা মাঠে নেমে কোনো না কোনো অযুহাতে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল এবং তখনও এভাবে সরকারি সম্পত্তিতে হামলা হয়েছিল মন্তব্য করে হানিফ বলেন, “তখনও তারা সফল হয়নি, এবারও হবে না।
“সাধারণ ছাত্রদের কাঁধে ভর করে ওরা নৈরাজ্য করছে। সরকার কঠোর হস্তে তাদের দমন করবে। এই সকল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে এবং শাস্তি দেওয়া হবে।”
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, “সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে রায় এসেছে সরকারের আইনজীবী লড়ার কারণেই, অর্থাৎ সরকার এই রায়ের পক্ষে কাজ করেছে।
“কিন্তু সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনে প্রবেশ করে বিএনপি জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবির ও ছাত্রদর উসকানি দিয়েছে, যার কারণে বিএনপি জামায়াতের ছাত্রীরা রোকেয়া হল থেকে মিছিল বের করেছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ছাত্র-ছাত্রীকে কোনো কথা পর্যন্ত বলেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করা হয়েছে।”
বিটিআরসি ভবন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রেরেলে কাদের ক্ষোভ সেটিও বিবেচনায় আনতে মানুষকে অনুরোধ করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি বলেন, “সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে সুবিধাভোগী সাধারণ মানুষ। বিএনপি-জামায়াত সরকারে থেকে কখনো কিছু করতে পারেনি, এখন এসব প্রকল্প তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। তাই তারা সুযোগ পেয়ে এগুলো ধ্বংস করতে চাইছে।”