“আমাদের ভোটের অধিকার নেই, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 05 Jun 2024, 05:37 PM
‘ভারতে ভোটের অধিকার আছে বলেই’ জনগণ ক্ষমতাসীন বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার আশাকে ‘রুখে দিতে পেরেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রতিবেশী দেশে ভোটের ফল প্রকাশের পরদিন বুধবার ঢাকায় এক আলোচনায় এই মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্মরণে দলটির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী উলামা দলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের এই আলোচনায় ফখরুলের বক্তব্যের একটি বড় অংশ ছিল ভারতের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ।
তিনি বলেন, “ভারত বর্ষে ভোটের অধিকার আছে বলেই কিন্তু তারা অন্তত এই যে মোদীর (নরেন্দ্র মোদী) তিনবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার যে ইচ্ছা, সেইটাকে তারা (জনগণ) রোধ করে দিয়েছে। আজকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তারা পাচ্ছে না।”
বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যে দানব গত ১৫ বছর ধরে আমাদের ঘরের মধ্যে, বুকের মধ্যে চেপে বসে আছে, নির্বাচনি ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, সব অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে… একে সরাতে না পারলে কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা থাকবে না, আমাদের সার্বভৌমত্ব থাকবে না।
“আমাদের ভোটের অধিকার নেই, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।”
ভারতে গত ১৯ এপ্রিল থেকে ৫৪৩ আসনের মধ্যে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সাত ধাপে নির্বাচন শেষ হয় গত ১ জুন। ভোট শেষের তিন দিন পর তা গণনা করা হয়। সব দলের অংশগ্রহণে এই ভোট হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে।
নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি ২৪০টিতে জয় পেয়ে টানা তৃতীয় দফা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ৯৯টি আসনে জয় পেয়ে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা ফিরে পাচ্ছে কংগ্রেস।
তবে টানা তৃতীয় জয়েও গেরুয়া শিবিরে আগের মত উল্লাস নেই। আর হেরেও কংগ্রেস ও তার জোট উৎফুল্ল। এর কারণ, বিজেপি এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সরকার গঠন করতে হলে জোটের শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হবে। আবার ভোট শেষে বুথ ফেরত জরিপের চেয়ে আসন কম পেয়েছে তারা।
২০১৪ সালে লোকসভায় ২৮২টি আসন ও ২০১৯ সালে ৩০৩টি আসন পেয়েছিল বিজেপি।
গত নির্বাচনে শরিকদেরকে নিয়ে বিজেপি জোটের আসন ছিল ৩৫২টি। এবার ঘোষণা ছিল ৪০০টি হবে। তবে বেশ কয়েকটি দল নিয়ে কংগ্রেসের জোট ‘ইনডিয়া’ তাদের বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। এবার বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোটের আসন হয়েছে ২৮৬টি। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইনডিয়ার আসন ২০২টি।
বাংলাদেশে ভোটের অধিকার নেই অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “ভোটাধিকারের সেই অবস্থাটা আমাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষজন ভোট দিয়ে যাতে তার নিজস্ব পছন্দমত প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারি তার ব্যবস্থা করতে হবে।”
দল-মতনির্বিশেষে সবাই মিলে গণআন্দোলন সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারকে পরাজিত করতে সক্ষম হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন বিএনপি নেতা।
‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র’: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি
মিয়ানমারের রাখাইন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের একাংশ নিয়ে খ্রিষ্টান দেশ গড়ার চেষ্টার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি নিয়েও কথা বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছেন যে, সাদা চামড়ার লোকেরা নাকি তাকে বলেছে যে, এখানে কোনো একটা দেশের এয়ারবেইস বানাবে। অর্থাৎ সেখানে তাদের জঙ্গি বিমান নামবে। আর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের একটা অংশ নিয়ে নতুন একটা খ্রিষ্টান রাষ্ট্র তৈরি করবার তারা চেষ্টা করছে।
“আমি গতকাল বলেছি, আজকেও আবার বলছি, প্রধানমন্ত্রীর উচিত হবে এই মুহূর্তে জনগণের কাছে তার প্রকৃত ব্যাখ্যা তুলে ধরা। কারা চাইছে এবং কেন চাইছে, কেন তা এতোদিন পরে প্রকাশ করছেন…… এটা আমরা জানতে চাই।”
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিন্ন ১৫৪টা নদীর হিস্যা আদায়, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সমস্যা ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের শেখ হাসিনার সরকারের ‘ব্যর্থ’ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
আয়োজক সংগঠন উলামা দলের আহ্বায়ক কাজী মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মোহা. কাজী আবুল হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতনও বক্তব্য রাখেন।