Published : 30 Apr 2025, 07:09 PM
চলমান রাষ্ট্রসংস্কার কর্মসূচিতে রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করেছে গণসংহতি আন্দোলন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
বুধবার বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হচ্ছে সংস্কার প্রশ্নে ঐক্যমত গড়ে তোলা। ঐক্যমত কমিশনে আলোচনার পর্যায়ে থাকা যেসব প্রশ্নে একমত হওয়া যাবে সেগুলোকে জাতীয় সনদ হিসেবে বাস্তবায়ন করার বিষয়ে আলাপ করেছি। যেসব দ্বিমত হবে সেগুলোকে জনগণের কাছে গিয়ে যার যার ম্যানিফেস্টো অনুযায়ী জনসমর্থন আদায়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার বিষয়েও আলাপ করেছি।”
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছে যেটা সব দল বলছে না। সংবিধান সংস্কার বা মৌলিক পরিবর্তনের মতো কাজগুলো করতে জনগণের সমর্থন লাগবে। সেজন্য সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন প্রয়োজন হবে। ১৯৭০ সালে যেমন গণপরিষদ ও পার্লামেন্ট তৈরির জন্য একটি নির্বাচন হয়েছিল। এবারই একই সাথে পার্লামেন্ট, সরকার গঠন এবং সংবিধান সংস্কারে জনমেন্ডেট নেওয়ার নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছি।”
আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে সাকি বলেন, “দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার আমাদের পুরোনো দাবি। আজকের বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধকরণ, নির্বাচনের আগে বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এই ধরনের আরও আলাপ চালাব। প্রয়োজনে দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা করব, আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক।”
বৈঠক শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “এনসিপি যে বিচার, মৌলিক সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছে তাসহ অনেকগুলো এজেন্ডার সঙ্গেই গণসংহতি আন্দোলন একমত, দ্বিমতও আছে। সে বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে৷ একটা ঐকমত্যের ভিত্তিতেই যাতে আমরা সংস্কার বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারি সেই প্রত্যাশা আমরা উভয় দলই ব্যক্ত করেছি৷
আওয়ামী লীগকে দলগতভাবে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, “আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে। পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে ধরনের পরিবেশ প্রয়োজন, সংস্কারের বিষয়টা কীভাবে অর্জন করতে পারি তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
বৈঠকে জোনায়েদ সাকি ছাড়াও গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি, মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক রায়, ইমরাদ জুলকারনাইন, তরিকুল সুজন ও কেন্দ্রীয় সদস্য অঞ্জন দাস উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ছাড়াও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আদিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, আশরাফ উদ্দিন মাহদী, অনিক রায়, যুগ্ম সদস্য সচিব ফরিদুল হক, মোল্লা ফারুক আহসান উপস্থিত ছিলেন।
বিকালে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক
বিকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যালয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে সংলাপে যুক্ত হন এনসিপির শীর্ষ নেতারা।
বৈঠক শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বেশিরভাগ বিষয়ে ঐক্যের জায়গা খুঁজে পেয়েছি। যেসব বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে সেখানেও ঐক্যের বিষয়ে আলোচনা করতে পারি।”
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “সংস্কারের ক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছে। আমরা কেবল উচ্চ কক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছি। উনারা দুই কক্ষেই সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি বিষয়টি আমরা আলোচনা করব। আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলেছি, উনারাও গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছেন।
“পাশাপাশি দল হিসাবে আওয়ামী লীগের বিচার, বিচার চলাকালীন সময়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা, নিবন্ধন স্থগিত করা। উনারা এই বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। এই বিষয়গুলো মাত্র আজকে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজন হলে মাঠেও এবিষয়ে আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করব।”
তিনি বলেন, “স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘব ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন এবং এনসিপি একমত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সংস্কারের বিষয়গুলোকে পাশ কাটিয়ে কেবল নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলছে। এই বিষয়টা জনমণে সংশয় তৈরি করছে।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, “জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটা পরিবর্তন আপনারা দেখেছেন। আমাদের অনেক চিন্তার সাথে এনসিপির চিন্তা মাঠে ময়দানে অনেকটাই একাকার। আজকে আমরা আলোচনা করতে পেরেছি। আমাদের মনোবল আরও বেড়েছে।
আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যে ফ্যাসিস্ট হাজার হাজার মায়ের কোল খালি করেছে, আমাদের দেশের টাকা পাচার করেছে এদের দলগত বিচার হবে। তারপর নির্বাচনের চিন্তা আমাদের মাথায় আসবে, নির্বাচন আমরা চাই। ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণের পক্ষে আমরা যেন একাকার হয়ে কাজ করতে পারি সবার দোয়া চাই।”