সংলাপ চালিয়ে যেতে সম্মত হওয়ার পরদিন রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে প্রধান দুই দলের নেতারা আবারো আলোচনায় বসেছেন।
Published : 11 Dec 2013, 11:35 AM
গুলশানে জাতিসংঘের একটি প্রকল্প কার্যালয়ে বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার পর এই বৈঠক শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মঈন খান এবং সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী এ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোও রয়েছেন এই বৈঠকে।
এর আগে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজও বৈঠক হবে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এটা শুরু হতে পারে।”
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই শীর্ষ নেতারাই মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠক করে আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হন।
নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে চার দিন ধরে দফায় দফায় বৈঠকের পর মঙ্গলবার বিকালে এই ঐকমত্যের কথা জানান ফার্নান্দেজ-তারানকো।
তবে গুলশান এলাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক নিল ওয়াকারের বাড়িতে মঙ্গলবারের ওই বৈঠক চলাকালে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ব্যাপক লুকোচুরি চলে।
পরে সন্ধ্যায় জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো এক বিবৃতিতে বলেন, “দুই পক্ষই সদিচ্ছার সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যেতে এবং সমঝোতায় আসার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে, যাতে উদ্বেগ কমিয়ে আনা যায়, আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়।”
তিনি বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে আজকের দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিনিধির আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুই পক্ষই দেখা করেছে এবং আলোচনা শুরু করেছে।”
একসঙ্গে বসার গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় দুই পক্ষকে স্বাগত জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত।
“এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ববোধ ও সাহসিকতার পরিচয় মিললো। পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার প্রতিও সাড়া দিলেন তারা।”
এই ‘অগ্রগতির’ কারণেই ঢাকা সফর একদিন দীর্ঘায়িত করেন ফার্নান্দেজ-তারানকো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বৈঠক ও একদিন পিছিয়ে বুধবার নেয়া হয়।
এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বৈঠকে উভয়পক্ষ সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে একমত পোষণ করেন।”
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ‘অনিশ্চিয়তা নিরসনের’ লক্ষ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব মধ্যস্ততার এই উদ্যোগ নেয়ায় বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয় বলে উল্লেখ করা হয় দলের বিবৃতিতে।
অবশ্য রাতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়, তাতে ছিল ভিন্ন সুর।
বিবৃতিতে বলা হয়, “বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, হরতাল, অবরোধসহ সব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করলেই নির্বাচনকালীন সরকারসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
“আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হরতাল, অবরোধ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস, বাস পুড়ে মানুষ হত্যা, বোমাবাজি, জানমালের নিরাপত্তাহীনতা, হত্যা, নাশকতা বন্ধ করে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়।”
বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানানো হলে সেক্ষেত্রেও তাদের নৈরাজ্য বন্ধ করতে বলে আওয়ামী লীগ।
“হত্যা হরতাল, অবরোধ, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস, রেললাইন উপড়ে ফেলাসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস, বাস পুড়ে মানুষ হত্যা, বোমাবাজি ও জানমালের নিরাপত্তাহীনতাসহ সকল প্রকার নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করলেই আটককৃতদের মুক্তি এবং আলোচনার অর্থবহ পরিবেশ সৃষ্টি হবে।”
“এই ধরনের নৈরাজ্য বন্ধ না করলে আলোচনা কখনোই অর্থবহ হবে না,” বলা হয় বিবৃতিতে।
‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনে এগিয়ে যাওয়া এবং তফসিল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের দাবি নিয়ে বিএনপির হরতাল-অবরোধে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যেই বাংলাদেশে আসেন বান কি-মুনের দূত ফার্নান্দেজ-তারানকো।
ঢাকায় ব্যস্ত সময়ের মধ্যে সফরের তৃতীয় দিন সোমবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে প্রথম মুখ খুলে তিনি শুধু বলেন, সদিচ্ছা থাকলে ‘শান্তিপূর্ণ সমাধান’ এখনো সম্ভব।