হরতাল: সুর পাল্টালো জামায়াত

নিবন্ধন বাতিল করে হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে হরতালের ঘোষণা দেয়া জামায়াতে ইসলামী এখন বলছে, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের এই কর্মসূচি নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2013, 04:23 PM
Updated : 13 August 2013, 04:23 PM

রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল দেয়ায় আইনমন্ত্রীর সমালোচনার জবাবে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “জামায়াতে ইসলামী আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বান করেনি।”

নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে করে গত ১ অগাস্ট রায় দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে দলটি।

দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান হরতাল আহ্বান করে বলেন, “পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মানুষের দুঃখ এবং কষ্টের কথা বিবেচনা করে আমরা এই মুহূর্তে হরতালের মতো কর্মসূচি থেকে বিরত রইলাম। তবে অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী এ রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”

জামায়াত তখন ১২ ও ১৩ অগাস্ট হরতাল ডাকে, পরে হরতাল পিছিয়ে ১৩ ও ১৪ অগাস্ট করা হয়।

রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকার পর হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ও প্রচার বিভাগের মো. ইব্রাহিমকে তলব করে।

তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার কারণ জানাতে তাদের আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর হাজির হতে বলা হয়েছে।

এরপর গত রোববার হরতাল সফল করার আহ্বান জানিয়ে রফিকুল ইসলাম যে বিবৃতি দেন, তাতে রায়ের বিরুদ্ধে কথাটি উহ্য রাখা হয়।

এতে বলা হয়, “জামায়াতের কারাবন্দি শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল করার দাবি না মেনে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার নীল নকশার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ঘোষিত লাগাতার ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য আমি সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”

আগের বিবৃতিগুলোর মতো সোমবার আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে হামিদুরের বিবৃতিও পাঠিয়েছেন প্রচার বিভাগের  মো. ইব্রাহিম।

হরতালের প্রথম দিন মঙ্গলবার সকালে বিচারকদের একটি কর্মশালায় উদ্বোধনের পর আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, হরতাল বা সভা সমিতি করে রায় বদলানো যায় না। এই হরতাল আহ্বান আদালত অবমাননার শামিল।

আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকায় সরকারি দলের নেতারাও জামায়াতের সমালোচনা করে আসছেন।

সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান বলেন, “সরকারের গণগ্রেপ্তার, অত্যাচার, গণনির্যাতন ও জামায়াতে ইসলামীকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী হরতাল আহ্বান করেছে।”

নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার হরতালে মঙ্গলবার রাজধানীর কল্যাণপুরে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের মিছিল। ছবি: তানভীর আহমেদ/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ঈদের ছুটির পরপরই জামায়াতের দুদিনের ডাকা হরতালের প্রথম দিন বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।

হরতালে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছাড়া আর সব ধরনের গাড়িই চলেছে, ট্রেন-লঞ্চ-বিমান চলাচলও ছিল স্বাভাবিক।

হরতালে দেশবাসীর স্বতস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে দাবি করে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বুধবারের হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

“সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন ও গ্রেপ্তার অভিযান উপেক্ষা করে জনগণ আজ স্বতস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করে ক্ষমতাসীন জুলুমবাজ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। দেশের জনগণ ক্ষমতাসীন জুলুমবাজ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।”

হরতালে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা জামায়াতের আমির তসলিম উদ্দিন ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির মো. শাহজাহানসহ সারা দেশে প্রায় দুইশতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে জামায়াত। তাদের মুক্তি দিতেও সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।

হরতালে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের হামলায় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে বলেও রফিকুল দাবি করেন।