ইউপি ভোট: বিদ্রোহীদের দাপটে হারছে নৌকা

গাইবান্ধা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রতীক নৌকা জয় পেয়েছে তিনটিতে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছে ১০টিতে; এদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের হলেও বিদ্রোহী হয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2021, 06:49 PM
Updated : 14 Nov 2021, 06:53 PM

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই ভোটে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের এভাবে পরাজয়ের তিন কারণ দেখছেন গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ শামস উল আলম হিরু।

তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের চেয়ে আঞ্চলিকতা বেশি কাজ করে। দলের মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকে। দলীয় অনেক প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ তুলনামূলকভাবে ভালো না থাকে না।”

এ তিন কারণে গাইবান্ধায় সদর উপজেলায় নৌকার ‘ভরাডুবি’ হয়েছে বলে জানান তিনি।

কাছের জেলা নীলফামারী সদরের ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে নয়টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছে। নৌকা জিতেছে বাকি দুটিতে।

নীলফামারী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছয়জনই আওয়ামী লীগে যুক্ত। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হন। 

জাতীয় নির্বাচনে যখন নৌকার জয় একচেটিয়া, সেখানে বিএনপির বর্জনের মধ্যে ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রতীক কেন জয় নিশ্চিত করতে পারল না?

এই প্রশ্নে নীলফামারীর নেতা ওয়াদুদ বলেন, “যারা মনোনয়ন পাননি, তারা নৌকার বিপক্ষে ভোট করেছেন। দলের সব নেতাকর্মীকে নৌকার পক্ষে কাজ করানো যায়নি। সার্বিকভাবে এটা একটা ব্যর্থতা। যে কারণে আমাদের ব্যর্থতাও ছিল। আবার এলাকাভিত্তিক ভোটও কাজ করেছে।”

ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের হারকে অবশ্য আওয়ামী লীগের হার মানতে নারাজ এই তৃণমূল নেতা।

“এখানে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেনি এবং আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাও নয়। এখানে আওয়ামী লীগের ভোট বেড়েছে, তবে নিজেদের প্রার্থীদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচন এলে সবাই আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে।”

বিএনপি ভোটে থাকলে বরং আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকত বলে মনে করেন ওয়াদুদ।

কোনো দলের নাম না নিলেও তিনি বলেন, “অন্য কোনো বড় দলের ভালো প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী থাকলে সবাই নৌকায় ঐক্যবদ্ধ হত।”

এবার ইউপি নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। তবে তাদের অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে অনেকে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে বৃহস্পতিবার ৮৩৪ ইউনিয়নে ভোট হয়েছে। এ ধাপে ৩৩০টিতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন, নৌকা জয় পেয়েছে ৪৮৫টিতে।

গাইবান্ধা সদর ও নীলফামারী সদরের মতো অনেক ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে হারতে হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইউপি নির্বাচনের দুই ধাপে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী ৭৫৩ জন নির্বাচিত হয়েছে। এর মধ্যে আড়াইশ’ জন নির্বাচিত হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হয়েছে ৪১১টি ইউপিতে।

পাঁচ বছর আগে দলীয় প্রতীকের প্রথমবারের ভোটে নৌকা প্রতীক জয় পেয়েছিল ২৬৭০ ইউপিতে। বিএনপি ৩৭২ ইউপিতে আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৮৮০ ইউপিতে জয় পায়।

বিদ্রোহীদের কাছে দল মনোনীত প্রার্থীদের এভাবে হারের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।

ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে আওয়ামী লীগে।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তৃণমূল পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের হুঁশিয়ারও করেছিলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি এমনও বলেছিলেন, “যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে আছে, তাদের মদদদাতাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। অনেক এমপি-মন্ত্রী আছেন, যারা মদদ দিচ্ছেন, আগামীতে তারা দলীয় মনোনয়নও পাবে না।”

তবে এত হুঁশিয়ারিতেও অধিকাংশ বিদ্রোহী প্রার্থীকে মানানো যায়নি। বরং তাদের ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে সংঘাতে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই ৪০ জনের মতো নিহত হয়। 

মাদারীপুরে ভোটগ্রহণের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধেছিল।

এই পরিস্থিতিতে ইউপিতে দলীয় প্রার্থী না রাখলে সংঘাত এড়ানো যাবে বলেও আওয়ামী লীগের মধ্যেও কেউ কেউ মত জানিয়েছেন।

সহিংসতায় উদ্বেগ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও ইউপিতে চেয়ারম্যান পদটি আগের মতো নির্দলীয় প্রতীকে করার সুপারিশ রেখেছেন।

তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে আগামী ২৮ নভেম্বর ১০০৪ ইউপি এবং ২৩ ডিসেম্বর ৮৪০ ইউপির ভোট রয়েছে। বাকি ইউপিগুলোর তফসিল দেওয়ারও প্রস্ততি চলছে।

দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন ভোট

দেড় কোটি ভোটারের ৮৩৫ ইউনিয়নে ১১ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৭৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

ইসির জনসংযোগ শাখার তথ্য অনুযায়ী, সর্বনিম্ন ৪২ দশমিক ২৮ শতাংশ ভোটগ্রহণ হয় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ৮৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোটগ্রহণ হয়।